তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতির বাড়ির সামনে রাখা মোটরবাইকে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। তৃণমূলের দাবি, ধৃত বিজেপি কর্মী। যদিও ধৃতের সঙ্গে দলের সরাসরি কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে বিজেপি।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম কাজল ঘোষ। সে আলিনগর গ্রামেরই বাসিন্দা। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতের কাছ থেকে পাঁচটি ডিটোনেটর, একটি এক রাউন্ডের পিস্তল, চারটি কার্তুজ, একটি রাইফেলের ফাঁকা মাগাজিন, তিনটে পাওয়ার জেল, একটি ডিল করার যন্ত্র, সুতলি দড়ি, জাল তৈরীর সুতো, সার্কিট বোর্ড-সহ বেশ কিছু বিস্ফোরণের উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় জানিয়েছে, পারিবারিক বিবাদের কারণেই সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। দু’টি পাওয়ার জেলের সাহায্যে সে রবিবার গভীর রাতে মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। জেরায় সে আরও জানিয়েছে, পাণ্ডবেশ্বরের শ্যামলা পঞ্চায়েতের আলিনগর গ্রামে তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি ভীমসেন ঘোষের সঙ্গে গাছের মালিকানা নিয়ে তার বিবাদ চলছিল। ভীমসেনবাবু তাকে হুমকি দিচ্ছিলেন।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, মোটরবাইক বিস্ফোরণে খনিতে ব্যবহৃত ডিটোনেটর ব্যবহার করা হয়েছিল। ঘটনার তদন্তে নেমে কয়েকজন খনিকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সূত্রেই জানা যায় কাজলের কথা। ধৃত কাজল বাঁকুড়ার মেজিয়ায় একটি বেআইনি কয়লাখনিতে কাজ করত। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই খনিতে ধসের জেরে পাঁচ জন চাপা পড়ে মারা যাওয়ার পর সে ফিরে বাড়ি ফিরে আসে।
সোমবার ভীমসেনবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, রবিবার গভীর রাতে তাঁর পাঁচিল ঘেরা বাড়ির উঠোনে রাখা মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু দুষ্কৃতী। বিস্ফোরণে মোটরবাইকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিটোনেটরের সঙ্গে তার সংযোগ করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। স্থানীয় তৃণমূল দাবি করেছিল, এই ঘটনার পিছনে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির হাত রয়েছে। কাজল ঘোষের গ্রেফতারের খবর পাওয়ার পর জামুড়িয়া ব্লক (২) তৃণমূলের সহ সভাপতি সিদ্ধার্থ রাণা দাবি করেন, “কাজলবাবু বিজেপি কর্মী। মোটরবাইক কাণ্ড বিজেপির মস্তিষ্কপ্রসূত। ওরা ভাবছে এভাবে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের জব্দ করবে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “লোকসভা নির্বাচনে বাবুল সুপ্রিয় জেতার পর গ্রামের পাঁচ জন বিজেপি কর্মীকে নিয়ে কাজলবাবু রাতের দিকে ভীমসেনবাবুর ঘরে ঢিল ছুঁড়ছিলেন। তখন গ্রামের লোকেরা ওদের ধরে ফেলেন।”
পারিবারিক বিবাদের কথা অস্বীকার করে ভীমসেনবাবুর দাবি, “আমি মোটরবাইকে বিস্ফোরণ ঘটার পর কাউকে দেখিনি। তাই নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ করিনি। পুলিশ তদন্তে করে একজনকে গ্রেফতার করেছে। পারিবারিক বিবাদ থাকলে কাজলের নাম সন্দেহের তালিকায় রাখতাম।”
যদিও বিজেপি ধৃতকে দলীয় কর্মী বলে মানতে চায়নি। বিজেপির জামুড়িয়া মণ্ডল কমিটির সভাপতি মৃণালকান্তি ঘোষ বলেন, “কাজলের সঙ্গে আমাদের দলের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করুক।