আসানসোল বাজারে ঢোকার জায়গাই নেই দমকলের।—নিজস্ব চিত্র।
শহরে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল। কিন্তু ছ’তলার বেশি চড়ার মতো সিঁড়িই নেই দমকলের কাছে। চেয়েও মেলেনি হাইড্রোলিক সিঁড়ি। তাই বহুতলে আগুন লাগলে কী ভাবে তা নেভানোর ব্যবস্থা হবে, মঙ্গলবার কলকাতায় চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশানালে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই প্রশ্ন উঠেছে আসানসোলেও। অবিলম্বে দমকলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন দাবি করেছেন শহরের বাসিন্দা ও নির্মাণকারীরা।
গত কয়েক বছরে এই শিল্পাঞ্চলে অনেক বহুতল নির্মাণ হয়েছে। মূল শহর এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশেও সে সব গড়ে উঠেছে। আসানসোল শহরে ১২-১৪ তলার বেশ কয়েকটি বহুতল তৈরি হয়েছে। আগের তুলনায় বেড়েছে দোকানপাট, বিপণিও। ফলে, আরও ঘিঞ্জি হয়েছে এলাকা। কিন্তু দমকলের পরিকাঠামোয় কোনও পরিবর্তন নেই।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল থেকে বরাকরএই বিস্তীর্ণ এলাকায় আগুন নেভানোর জন্য রয়েছে মাত্র দু’টি বড় ও একটি ছোট ইঞ্জিন। দমকলকর্মীদের দাবি, যে সব সামগ্রী নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হয় তাতে বহুতলে আগুন লাগলে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। ১২ বা ১৪ তলা তো দূর, ছ’তলায় আগুন লাগলেও পৌঁছনোর মতো সিঁড়ি নেই। এই উপলব্ধি দমকল কর্তাদের অনেক আগেই হয়েছে। আসানসোল দফতরের ওসি সেলিম জাভেদ বলেন, “কয়েক বছর আগে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা বহুতলগুলিতে আগুন নেভাতে ব্যবহারের জন্য একটি হাইড্রোলিক সিঁড়ি আনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তা এখনও পাইনি।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে শিল্পাঞ্চলেও বহুতলগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সে দিনই দমকলের তরফে পরিকাঠামোর আরও উন্নয়ন ও একটি হাইড্রোলিক সিঁড়ির প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাব আর কার্যকরের উদ্যোগই হয়নি। শহরের তৎকালীন মেয়র তথা আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরাও এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে দমকল মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
এই ধরনের আশ্বাস অবশ্য শহরবাসী এর আগেও অনেক বার পেয়েছেন। কিন্তু সে সব বাস্তবায়িত না হওয়ায় কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে আর কিছু করার থাকবে না বলে তাঁদের দাবি। আসানসোল বিল্ডার্স আ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক বিনোদ গুপ্তের প্রশ্ন, “শহর বাড়ছে। এত বহুতল নির্মাণ হচ্ছে। সব কিছুই উন্নত হচ্ছে। তাহলে দমকলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হবে না কেন?” বহুতল নির্মাতা শচীন রায়ের কথায়, “দমকলের পরিকাঠামো একেবারেই ভাল নয়। আমরা আরও উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছি।”
আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, “দমকল কী প্রস্তাব দিয়েছিল আমার জানা নেই। তবে প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ হচ্ছে।” আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি পুরসভার দেখার কথা। তবে এডিডিএ-র কাছে দমকলের পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও প্রস্তাব এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস তাঁর।