আসানসোলে মিছিল। বুধবার দুপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
দেড় মাস পরে ফের মন্ত্রিসভায় আসানসোলের প্রতিনিধি। বুধবার মলয় ঘটক মন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠের পরে তাই স্বস্তি শহরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। মলয়বাবু শপথ নেওয়ায় বুধবার তাঁর অনুগামীরা তাই একটি মিছিলও করলেন শহরে।
সম্প্রতি লোকসভা ভোটে আসানসোলে দলীয় প্রার্থী দোলা সেনের হারে ক্ষুব্ধ হন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, আসানসোলে দলের অন্তর্ঘাতের ফলেই জিততে পারেননি দোলা, এমনটাই মনে করেছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ১৬ মে ভোট গণনার পরেই নেত্রীর ডাক পেয়ে কলকাতায় চলে যান এই কেন্দ্রে দলের তরফে ভোটের দায়িত্বে থাকা মলয়বাবু। ১৯ মে কৃষিমন্ত্রির পদ থেকে ইস্তফাও দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু বেশি দিন মন্ত্রিসভার বাইরে থাকতে হল না তাঁকে। মাস দেড়েকের মাথাতেই তাঁকে ফেরানো হল।
মলয়ের মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পরেই আসানসোলে দলের অন্দরে ও বাইরে প্রতিবাদ শুরু হয়। তাঁর অনুগামীরা শহরের একাধিক জায়গায় মিছিল, প্রতিবাদ সভা, এমনকী রাস্তা অবরোধও করেছিলেন। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে আসানসোলে ফেরার পরে বিএনআর এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে নিজের অনুগামী নেতা-কর্মীদের নিয়ে পরবর্তী কৌশল ঠিক করতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেন মলয় ঘটক। এই ক’দিনে দলের সব দলীয় কর্মসূচিতেই তিনি ছিলেন। সম্প্রতি আসানসোলে তৃণমূল যুবার ডাকে রেলভাড়া ও পণ্য মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিল ও সমাবেশেরও আয়োজন করেন তিনি। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে এই কর্মসূচিতে বড় জমায়েতের জন্য মলয় ঘটককেই অভিনন্দন জানান দলের দুই সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। মলয়কে আসানসোলে তৃণমূলের ‘প্রতিষ্ঠাতা’ বলেও দাবি করেন শুভেন্দু।
তৃণমূলের অন্দরে বেশ কিছু দিন ধরেই কানাঘুষো চলছিল, মন্ত্রিসভায় ফেরানো হতে পারে মলয় ঘটককে। অবশেষে বুধবার তিনি ফের শপথবাক্য পাঠ করার পরে খুশির হাওয়া শহরের তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ শহরের সিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে তৃণমূলের একটি মিছিল বেরোয়। বাজি-পটকা ফাটিয়ে মিছিল করেন দলের কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন শহরের আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়া। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “আমরা সবাই চেয়েছিলাম মলয়বাবু মন্ত্রিত্ব ফেরানো হোক। তা হওয়ায় আমরা খুশি। আশা করি, আবার আসানসোলে উন্নয়নের কাজে গতি আসবে।”
আসানসোল থেকে রাজ্যে প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন মলয়বাবুই। শহরবাসীর অনেকের মতে, এলাকার এক জন মন্ত্রী হওয়ায় আসানসোলে এক ধাক্কায় অনেক কাজ হয়েছে। যেমন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, সিবিআই আদালত, মহিলা থানা, জেলা পরিষদ কার্যালয়, মহকুমা হাসপাতালের জেলা হাসপাতাল উন্নীত হওয়া-সহ নানা কাজ হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর নিয়ে যে পৃথক জেলা তৈরির প্রক্রিয়া চলছে, মলয়ের মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পরে তা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকেই। এ দিন অবশ্য তাঁদের মুখে ফের হাসি। আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্ত বলেন, “আশা করি এ বার আলাদা জেলা ঘোষণার তোড়জোড় শুরু হবে।” চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের মতে, “শহরে এক জন মন্ত্রী থাকলে সার্বিক উন্নয়ন দ্রুততার সঙ্গে হয়, যা এই মুহুর্তে আসানসোলের জন্য খুবই প্রয়োজন।” আইনজীবী মিতা মজুমদার দাবি করেন, “আসানসোল জেলা হলে এখানে জেলা আদালত হবে। এখানকার শিক্ষা ও বাণিজ্যের প্রসার হবে। মলয়বাবু মন্ত্রী হওয়ায় সেই কাজ তরান্বিত হবে বলে মনে করি।” ২০১১ সালে প্রথম বার মলয় ঘটক মন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করার পরে শিল্পাঞ্চলে ছিল খুশির হাওয়া। বুধবার অবশ্য শহরে খানিকটা স্বস্তির মেজাজ। এ দিন বারবার চেষ্টা করেও মলয়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।