ভিড় বাজারে। নিজস্ব চিত্র।
নববর্ষের আগে আর হাতে পাওয়া যাবে একটি সপ্তাহ। শেষ চৈত্রের কাঠফাটা রবিবারের বিকেলটা তাই হেলায় হারাতে চাইলেন না কেউই। সেলের বাজার তাই এ দিন জনারণ্য। এক হাতে ছাতা, অন্য হাতে গুচ্ছ ব্যাগ সামলে গিন্নিরা ছুটেছেন এ দোকান-সে দোকানে। ছেলেমেয়ের হাত সামলাতে হিমসিম, তবু পিছপা নন দর কষাকষিতে। পথ চলতে চলতে কড়া নজর কোন দোকানে ছাড় বেশি, আবার জিনিসটাও মিলছে ভাল।
বেনাচিতি, চণ্ডীদাস, স্টেশন বাজার-সহ শিল্পাঞ্চলের সব বড় বাজারেই এ দিন এক ছবি। এক দিকে ফুটপাথে জামাকাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসা খুচরো ব্যবসায়ীদের ‘সেল-সেল’ চিৎকার। অন্য দিকে বড় দোকানিরাও সামনের ফাঁকা জায়গায় জিনিসপত্র সাজিয়ে বসে। একে চড়া গরম, তার সঙ্গে চিল-চিৎকার। সব মিলিয়ে একেবারে চৈত্র সেলের পরিবেশ। পাল্লা দিয়ে ছাড় দেওয়ার চেষ্টা বিভিন্ন শপিং মলেও। জুতো থেকে জামা, চশমা থেকে বাহারি ব্যাগ, সবেতেই মিলছে ছাড়।
চণ্ডীদাস বাজারে এসেছিলেন এ-জোনের শ্যামলী কর্মকার। তাঁর কথায়, “এখন দেখছি শপিং মলে সারা বছরই কিছু না কিছু ছাড় থাকে। তবে সাবেক বাজারে চৈত্র সেলের জিনিস কেনার নেশা একদম আলাদা। সারা বছরের জন্য পরিকল্পনা করে কেনাকাটা সেরে ফেলা যায় এই সময়ে।” মায়ের হাত ধরে বাজার ঘুরে কেনাকাটা করছে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া তুলিকা মহাপাত্র। তার কথায়, “পড়ার চাপ এখন কম। পয়লা বৈশাখ ক্লাবে অনুষ্ঠান আছে। প্রতিদিন তার রিহার্সাল চলছে। নববর্ষের উপহার হিসেবে মা জামা কিনে দিচ্ছেন। আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।” দেখা গেল, বিকেল থেকেই এই সব বাজারে ভিড় জমতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পরে হঠাৎ তা বেড়ে গেল এক ধাক্কায়।
দোকানের সামনে রাস্তায় যানবাহন রাখার জন্য বাজারের সামনের রাস্তায় অল্পবিস্তর যানজটও দেখা গেল। তা নিয়ে বাজার করতে আসা মানুষজন বিরক্তিও প্রকাশ করলেন। তাঁদের মধ্যেই কেউ কেউ আবার অন্য দোকানের সামনে গাড়ি রেখে ঢুকে গেলেন ভিতরে। ও দিকে ভিড়ের মাঝেই রাস্তার পাশে আইসক্রিম, ফুচকার স্টল হাজির। দেদার বিকোচ্ছে সে সব। দোকান থেকে রাস্তায় নামতেই বায়না শুরু, “মা আইসক্রিম খাব।” ভিড় দেখা গেল চাট, এগরোল, চিকেন রোল, বিরিয়ানির স্টলেও। বেনাচিতি বাজারে আইসক্রিম বিক্রেতা বিজয় প্রসাদ বললেন, “আমরা অবশ্য কোনও সেল দিচ্ছি না। তবে বিক্রি হচ্ছে ভালই।”
যাঁরা শপিং মলে ভিড় জমিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ জানালেন, বাইরে চড়া রোদ। রবিবারের সকালে তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন। ঘুরেফিরে বাজার করছেন। একটা পছন্দ না হলে অন্য দোকানে সময় নিয়ে বাজার করছেন। গাদাগাদি ভিড় নেই। ঠান্ডা পরিবেশ। পানাগড় থেকে সিটি সেন্টারের একটি শপিং মলে বাজার করতে এসেছিলেন ঝিমলি চক্রবর্তী। তিনি বললেন, “দুপুরে সিনেমা দেখলাম। অনেক দোকানেই ভাল ছাড় দিচ্ছে। এ বার কেনাকাটা করব। বাড়ি ফিরতে রাত।” হাতখুলে বাজারের সুযোগ তো বছরে এই এক বারই। তা কি হারানো যায়? প্রশ্ন তুলে এগিয়ে গেলেন ঝিমলি।