রোদে হলুদ হয়ে গিয়েছে শশা গাছ। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই প্রবল গরম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আর্দ্রতা। কোথাও কোথাও চলছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে চাষের ক্ষতি হচ্ছে গোটা জেলা জুড়ে।
বর্ধমান জেলার বেশির ভাগ মানুষ চাষের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এ বছরের শুকনো ও গরম আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকে সব্জি চাষে সমস্যা দেখা গিয়েছে। তাপপ্রবাহের ফলে পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বরবটির মত ফসলের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের উপদ্রব। থমকে যাচ্ছে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। পূর্বস্থলীর সব্জি চাষি সহিদূল শেখ বলেন, “প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কমে গিয়েছে। সব্জি গাছ মাঠেই ঝিমিয়ে পড়ছে।” তাঁর আশঙ্কা, এই গরম চলতে থাকলে এ বছর সব্জির উৎপাদন অনেক কমে যাবে। কালনা মহকুমার জিওরারা, কালেখাঁতলা, পারুলিয়া-সহ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে পাইকারী বাজার। গরম চলতে থাকায় এই বাজারেও সব্জির জোগান কমেছে।
পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকেই রয়েছে বেশ কিছু আম ও লিচুর বাগান। বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এই বাগানগুলির গাছেও ফল আসছে কম। একটি আমবাগানের মালিক শশাঙ্ক চৌধুরী বলেন, “এ বার আম, লিচু গাছের মুকুল অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম হয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রচুর কাঁচা আম ঝরে যাচ্ছে।” শশাঙ্কবাবুর আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে এ বার আম ও লিচুর দাম অনেকটাই বাড়বে।
শুধু কালনা মহকুমাই নয়, অতিরিক্ত গরমের কারণে সমস্যা দেখা গিয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতারের কিছু এলাকায় ঝিঙে গাছের ফল ঝরে যাচ্ছে। কাটোয়ার কেতুগ্রামে কলাইয়ের খেতে ফলছিদ্রকারী পোকা কলাইয়ের গুটি নষ্ট করে দিচ্ছে। রায়নার কিছু তরমুজ ও শশার খেত থেকে পর্যাপ্ত ফলন মিলছে না। চাষিরা জানিয়েছন, শশা গাছের পাতা গরমের কারণের হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শশা গাছে একই সমস্যার খবর মিলেছে কালনা ২ ব্লকের বেশ কিছু গ্রামে। পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লক কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠে থাকা কুমড়োর ফুল লাল হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। সব্জি চাষ ছাড়াও তাপপ্রবাহের কারণে পাট ও তিল চাষেও ক্ষতির সম্ভবনা দেখা গিয়েছে। জেলার এক কৃষি কর্তা বলেন, “এখন তিল গাছ পুষ্ট হওয়ার সময়। কিন্তু পর্যাপ্ত জল না পাওয়ায় তিল গাছের ফলনে সমস্যা হচ্ছে।” একই সঙ্গে পাট গাছে শুয়োপোকার আক্রমণ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত-সহ বেশ কিছু এলাকায় পেয়ারা গাছে দেখা গিয়েছে দাগ। গরমের ফলে জেলায় চাষের নানা সমস্যার কথা স্বীকার করে কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের পরামর্শ, ফসলে ওষুধের সঙ্গে আঠা মেশালে মিলবে উপকার। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে চাষিদের ধৈর্য্য রাখতে হবে। ফসলের রোগ নিয়ে কৃষি দফতরের কর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ দিতে হবে। ভারী বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভবনা খুব কম।”