শুকনো পড়ে নলকূপ। কুষ্ঠ কলোনিতে বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
ভোটের পালে এ বার না কি বেশ হাওয়া লেগেছে, শুনেছেন তাঁরা। কিন্তু সে হাওয়ার ছিটেফোঁটা তাঁদের গায়ে লাগেনি।
নামে পুর এলাকা। তবে দুর্গাপুরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কুষ্ঠ কলোনিতে গেলে তা বোঝা মুশকিল। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা, খারাপ হয়ে পড়ে নলকূপ, পথে আলো নেই। নেই কোনও প্রচারও। এমনই অভিযোগ কলোনির বাসিন্দাদের।
সোমবার বিকেলে শেষ হয়ে গিয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট-প্রচার। কুষ্ঠ কলোনিতে অবশ্য দেওয়াল লিখন নেই, পোস্টার-ফ্লেক্সও নেই। ভোট চাইতে আসেননি কোনও প্রার্থীও। বাসিন্দাদের অনেকেরই তাই খেদ, “শহর থেকে দূরে বিচ্ছিন্ন ভাবে থাকি আমরা। অনেক সমস্যা। আশা করেছিলাম, প্রার্থীদের কেউ হয়তো আসবেন আমাদের খোঁজ নিতে। আমাদের দুর্ভাগ্য!”
মূল পুর এলাকা ও এই কুষ্ঠ কলোনির মাঝে রয়েছে দামোদরের খাল। শহর থেকে রেললাইন পেরিয়ে সেই ক্যানালের পাড় ধরে কয়েক কিলোমিটার মোরাম রাস্তা পেরোলে পৌঁছানো যায় সেখানে। ১৯৮৮ সালে গোপীনাথপুরে রাজ্য সরকারের খাস জমি কিনে শহরের বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী কুষ্ঠ রোগীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দুর্গাপুর পুরসভা। প্রায় ৬০টি পরিবারের বাস। ভোটার শ’খানেকের বেশি। ১৯৮৯ সালে প্রাথমিক স্কুল চালু করে পুরসভা। সেই স্কুলেই বুথ বসে। বুধবারও যথারীতি বসবে। বাসিন্দারা জানান, তাঁরা প্রতি বারের মতোই ভোট দেবেন। তবে প্রচারের কোনও স্বাদ ছাড়াই।
ষাট পেরোনো পুতুল মুর্মু বলেন, “কোন দলের কে প্রার্থী, ঠিক মতো জানি না।” তিনি জানান, বরাবর আর কেউ না এলেও সিপিএমের লোকেরা আসতেন। প্রার্থীও আসতেন। তিনি বলেন, “এ বার আর কেউ এল না!” সোমবার বিকেলে কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি দেওয়ালে ফিকে হয়েও রয়ে গিয়েছে পুরসভার সিপিএম প্রার্থীর পক্ষে দেওয়াল লিখন। লতিকা বাউড়ি নামে এক মহিলা জানান, গত পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থী দেবব্রত সাঁই এসেছিলেন প্রচারে। তিনি বলেন, “শুনছি এ বার না কি ভোটের খুব হাওয়া লেগেছে। তাই ভেবেছিলাম, প্রার্থীরা কেউ না কেউ আসবেন। কিন্তু কোথায় কি!” বিএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া অজয় মাহাতো অভিযোগ করেন, রাস্তা খারাপ। শহর থেকে কলোনিতে আসার রাস্তায় আলোর বালাই নেই। রাতে কেউ অসুস্থ হলে বিপাকে পড়তে হয়। সংস্কারের অভাবে বাড়িঘর বেহাল। কাজ নেই সবার। অজয়ের কথায়, “ভোটের প্রচারে কেউ এলে সরাসরি দাবি-দাওয়া জানানো যায়। কিন্তু সে ভাবে কেউ এলেনই না।” রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসেবে শহরে কাজ করতে যান সুভাষ মোদক। মাসে ১২-১৫ দিন কাজ জোটে। তিনি বলেন, “এ ভাবে কি দিন চলে? কাজ করতে চাই। কিন্তু কাজ নেই।”
গত পুরভোটে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছিলেন সিপিএমের শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। কুষ্ঠ কলোনির ১০২টি ভোটের মধ্যে তিনি পান ৮৬টি। তাঁর দাবি, দেওয়াল লিখন না হলেও এ বার বাড়ি-বাড়ি প্রচার হয়েছে। লিফলেটও বিলি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের ওয়ার্ডের জন্য প্রার্থীকে দু’ঘণ্টা পেয়েছিলাম। তার মধ্যে আর কুষ্ঠ কলোনি পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক তৃণমূল নেতা জানান, পুরভোটে কুষ্ঠ কলোনির বেশির ভাগ সমর্থন ছিল সিপিএমের দিকে। তাই সেখানে প্রচারে জোর দেওয়া সময় নষ্ট বলে মনে করেছে দল। তৃণমূলের প্রচার কমিটির অন্যতম সদস্য দেবব্রত সাঁই অবশ্য বলেন, “আমাদের ছেলেরা গিয়েছিলেন। তবে শহর থেকে বহু দূরে বলে প্রার্থীকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।”