প্যারাসুট, মাল্টি সাউন্ডের দাপটে উধাও ছুঁচোবাজিরা

আলোর উত্‌সবে নানা আতসবাজির রোশনাই শিল্পাঞ্চল জুড়ে। আর সেই রোশনাইয়ে ঢাকা পড়ে অন্ধকারে যেতে বসেছে পুরনো দিনের নানা বাজি। মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী দোকানে পসরা হরেক রকম বাজির। ঢেলে বিক্রি হচ্ছে টুয়েলভ্ স্টার, প্যারাসুট রকেট, গোল্ডেন সার্চ ইত্যাদি নানা নিত্যনতুন বাজি।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার ও সুশান্ত বণিক

দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩৬
Share:

বাজির পসরা। —নিজস্ব চিত্র।

আলোর উত্‌সবে নানা আতসবাজির রোশনাই শিল্পাঞ্চল জুড়ে। আর সেই রোশনাইয়ে ঢাকা পড়ে অন্ধকারে যেতে বসেছে পুরনো দিনের নানা বাজি।

Advertisement

মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী দোকানে পসরা হরেক রকম বাজির। ঢেলে বিক্রি হচ্ছে টুয়েলভ্ স্টার, প্যারাসুট রকেট, গোল্ডেন সার্চ ইত্যাদি নানা নিত্যনতুন বাজি। এক একটির এক এক রকম বৈচিত্র্য। কেউ আকাশে মালা তৈরি করে তো কেউ বাঁশের কাঠামোর উপর বসে গড়ে তোলে আলোর কদমগাছ।

এই বৈচিত্র্যের দাপটে বাজার পড়ন্ত কালিপটকা, দোদমা, ছুঁচো বাজি বা সাপবড়ার। নানা দোকান ঘুরেও খোঁজ মেলে না তাদের। তুবড়ি, চরকি বা তারাবাজি এখনও রয়েছে। তবে আরও আধুনিক হতে হয়েছে তাদের। মশলার গুণে আরও উজ্জ্বল হতে হয়েছে এই সব বাজিকে। বিক্রেতারা জানালেন, শব্দ দূষণের কথা মাথায় রেখে কিছু বাজি বিক্রি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সেগুলি তাই এখন অতীত হয়ে গিয়েছে। আবার কিছু বাজি বাজারের বাইরে চলে গিয়েছে স্রেফ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে। দুর্গাপুর সিটিসেন্টারের এক বাজি বিক্রেতা সুশান্ত ঘোষ বলেন, “সবাই চাইছেন, আকাশে আলোর রোশনাই ঝরে পড়ুক। আমরাও সে কথা মাথায় রেখেই বাজি আনছি।”

Advertisement

তবে দূষণ বা ধরপাকড়ের জন্য শব্দবাজি বিক্রি বন্ধ, এ কথা যে পুরোপুরি ঠিক নয়, বাজার ঘুরে খুঁটিয়ে দেখলেই তা নজরে পড়ে। চকোলেট, দোদমা থেকে মাল্টি সাউন্ডরং মশাল, তুবড়ির আড়ালে লুকিয়ে রাখছেন এক শ্রেণির বিক্রেতারা। পাল্লা দিয়ে সে সব বিক্রিও হয়ে যাচ্ছে। আসানসোলের ঘাঁটিগলির এক বাজি বিক্রেতা জানালেন, শব্দবাজির মধ্যে চকোলেট বোমার চাহিদাই বেশি। গুণমান অনুযায়ী এক ডজনের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৯০ টাকায়। বানর্র্পুরের ব্যাঙ্ক মোড়ের কাছে একটি অস্থায়ী বাজির দোকানের বিক্রেতা দাবি করেন, তাঁর কাছে ভাল মানের গোল্লা বোমা আছে।

জানা গিয়েছে, শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তেই অল্পবিস্তর শব্দবাজি বিক্রি হচ্ছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে বরাকর, রানিগঞ্জ, নিয়ামতপুর ও আসানসোলের মুল বাজার এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের সীমানা এলাকার শহর বরাকরে বেশ ভাল দরে বিকোচ্ছে গোল্লাবোমা ও মাল্টি সাউন্ড। শব্দবাজি না ফাটানোর আবেদন জানিয়ে সচেতনতামূলক একটি ট্যাবলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাচ্ছে প্রশাসন। দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের আসানসোল দফতরের আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার বলেন, “এই প্রচার অভিযানের পাশাপাশি আমরাও সজাগ থাকছি। অভিযোগ এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশের দাবি, এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চলছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী বাজির দোকান খুটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শব্দবাজির জোগান রুখতে মূলত সীমানা অঞ্চলগুলি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, চিরকুণ্ডা, কুমারডুবি, মিহিজাম এলাকায় ঢেলে শব্দবাজি বিক্রি হচ্ছে। সেই বাজিগুলিই রূপনারায়ণপুর, বরাকর হয়ে শিল্পাঞ্চলের অন্যত্র ঢুকে পড়ছে। কয়েক জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেল, সাবান বা বিস্কুটের ছাপ মারা বাক্সে করে পাচার হচ্ছে শব্দবাজি। গাড়ির ডিকিতে চাপিয়েও অনেক সময়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভোরের দিকে তা বেশি হচ্ছে। কারণ, এই সময়ে সীমানা এলাকায় নজরদারি কিছুটা শিথিল থাকে। এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিত্‌ ঘোষ বলেন, “আমরা সীমানায় নজরদারি বাড়িয়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement