কলেজে এত দিন লড়াইয়ে ছিল লাল ও সবুজ। এ বার সেই লড়াইয়ে ভাগ বসাতে কলেজে-কলেজে মাথা তুলছে গেরুয়া।
লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্য জুড়ে সংগঠন বাড়ানোর লক্ষে নেমেছে বিজেপি। একই রাস্তা ধরেছে বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। বর্ধমান জেলার নানা কলেজে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে তাদের। আগের তুলনায় সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব। জানুয়ারির গোড়ায় কলেজে-কলেজে যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে, সেখানে তাঁরা রীতিমতো লড়াই করবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন এবিভিপি নেতারা।
গত দু’বছরে জেলার একটি কলেজেও ছাত্র সংসদ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবিভিপি। ২০১১ সালে শুধুমাত্র কাটোয়া কলেজে ২টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল তারা। কিন্তু সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের দাবি, গত ছ’মাসে বর্ধমানের ১৪টি কলেজে ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে আসানসোলের দু’টি কলেজ, রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ, বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ, চন্দ্রপুর কলেজ ও কালনা কলেজ।
এবিভিপি নেতাদের দাবি, তাঁদের সংগঠন যে বাড়ছে তা জেলার নানা প্রান্তে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার ঘটনাতেই পরিষ্কার। গত সেপ্টেম্বরে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে এবিভিপি-র উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। গ্রামীণ বর্ধমানেও সম্প্রতি এবিভিপি-র কর্মীদের সংসদের ভিতর আটকে মারধরের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র দিকে। এবিভিপি-র এই দাবি যে পুরোপুরি ভুল নয়, তা প্রকারান্তরে মেনে নিচ্ছেন টিএমসিপি নেতারা। তাঁরাও মনে করছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জেলার বেশির ভাগ কলেজেই এবিভিপি-র সঙ্গে লড়াই হবে।
এবিভিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে গোটা জেলায় মেরেকেটে পাঁচশো সদস্য ছিল। এ বছর জুলাইয়ের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের গোড়া পর্যন্ত সদস্য অভিযান চলেছে। এই তিন মাসেই সদস্য সংখ্যা পাঁচ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজারে। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে এবিভিপি মেপে পা ফেলতে চাইছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি অনিরুদ্ধ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “যে সব কলেজে টিএমসিপি-র মোকাবিলা করতে পারব, সেখানেই আমরা প্রার্থী দেব।” সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য আলমগির মোল্লার অভিযোগ, “টিএমসিপি আমাদের সদস্যদের প্রতি দিন হুমকি দিচ্ছে। চড়, থাপ্পড়ও মারছে। তার পরেও আমাদের সদস্যেরা পিছিয়ে যাচ্ছেন না। এবিভিপি নেতাদের দাবি, হাটগোবিন্দপুর, বর্ধমান রাজ কলেজের মতো কয়েকটি কলেজে টিএমসিপি-র বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা এবিভিপি-তে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তবে বিজেপি-র প্রভাব বাড়ার জন্যই তাঁদের সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে, এ কথা মানতে চাননি এবিভিপির নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি-র সঙ্গে এবিভিপি-র মতাদর্শের মিল আছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপি-র হাওয়া তাদের পালে লেগেছে, এমন ভাবা ভুল। সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুভ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করা-সহ নানা বিষয় নিয়ে আমরা লাগাতার আন্দোলন করছি। শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে সংগঠনের সদস্য হচ্ছেন। গত ১৯ অগস্ট শিল্পাঞ্চলে ও ২৪ অগস্ট গ্রামীণ এলাকায় এবিভিপি-র কর্মশালা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর বর্ধমানে ছাত্র সম্মেলন করা হয়েছে।” তিনি জানান, সেখানে ঠিক হয়েছে, ‘সেভ ক্যাম্পাস, সেভ এডুকেশন’ নাম নিয়ে কলেজে-কলেজে প্রচার করা হবে। গত ৭ নভেম্বর কয়েকশো সদস্য নিয়ে বর্ধমানে বিক্ষোভ সমাবেশও করে এবিভিপি।
এবিভিপি-র এই উত্থানে কপালে ভাঁজ টিএমসিপি নেতাদের। জেলা টিএমসিপি-র একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি সংগঠনের এক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, কলেজ চত্বরে গেরুয়া পতাকা দেখলে খুলে ফেলে সেখানে নিজেদের পতাকা টাঙাতে হবে। তবে পতাকা খুলে বা পোস্টার ছিঁড়ে এবিভিপি-কে আটকানো যে মুশকিল, তা মানছেন টিএমসিপি-র অনেকেই।
তবে এবিভিপি-কে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ টিএমসিপি নেতারা। সংগঠনের সহ-সভাপতি সুমন দাস বলেন, “এসএফআইয়ের কয়েক জন এবিভিপি-তে নাম লিখিয়েছেন। তাঁরাই নানা মিথ্যে কথা চারদিকে বলে বেড়াচ্ছেন। সে সবের যে কোনও ভিত্তি নেই তা কলেজ ভোটের পরেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।” জেলায় এবিভিপি-র সদস্য বেড়েছে, তা মানতে রাজি নন এসএফআই নেতারাও। সংগঠনের এক নেতা বলেন, “টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে এবিভিপি কিছু বেড়েছে। আমাদের সংগঠনের অবস্থা ভাল। তবে কলেজে-কলেজে অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশাসনকে নিশ্চিয়তা দিতে হবে।”