মনোনয়ন দিচ্ছেন বংশগোপাল। —নিজস্ব চিত্র।
নকশাল কর্মী থাকাকালীন দোলা সেন ছিলেন তাঁর সতীর্থ। পরে দোলা যোগ দেন তৃণমূলে। তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁরও। এ বার তাঁকে দেখা গেল এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বংশগোপাল চৌধুরীর পাশে।
তিনি সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ২০০৯ লোকসভা ভোটেও যাঁকে আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী মলয় ঘটকের সমর্থনে প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল। এমনকী, মলয়বাবুর মনোনয়ন দাখিলের দিনে দলীয় পতাকা-সহ হাজার খানেক সদস্য-সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেই সোমনাথবাবুই বৃহস্পতিবার সিপিএম প্রার্থী বংশোগোপালবাবুর মনোনয়ন পেশের সময়ে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে হাজির হলেন। সিপিএম প্রার্থীর প্রস্তাবকও হলেন তিনি।
২০০৬ সালের গোড়া থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় সোমনাথবাবুর। মমতার সিঙ্গুর আন্দোলনে এই শিল্পাঞ্চল থেকে সোমনাথবাবু ও তাঁর দলের লোকজনের একটা বড় যোগদান ছিল। তাঁর এক সময়ের সতীর্থ তথা তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনের সঙ্গেই এক যোগে তিনি মমতার প্রায় সব আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্রে তাঁদের সংগঠন তৃণমূল প্রার্থীকে সরাসরি সমর্থনও করেন।
এ বার তিনি সিপিএমের হাত ধরলেন কেন? এ দিন সোমনাথবাবুর দাবি, “যে প্রত্যাশা নিয়ে তৃণমূলের হাত ধরেছিলাম, তা পূরণ হয়নি। গত ৩৪ মাসেই এই সরকার প্রমাণ দিয়েছে, তারা প্রকৃতপক্ষে মানুষের সঙ্গে নেই। তাই এদের সঙ্গ ছেড়েছি।” তাঁর এই দাবি প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তথা এ বারের ভোটে তৃণমূলের অন্যতম কাণ্ডারী মলয় ঘটক বলেন, “সোমনাথবাবু বা তাঁর দল আমাদের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। এ ব্যাপারে বেশি কিছু বলতে চাই না।”
নির্বাচনের ঠিক মুখে শুধুই কি তৃণমূলের বিরোধিতা, না কি প্রাক্তন সতীর্থ দোলা সেনের বিরুদ্ধাচরণেই এই সিদ্ধান্ত, সে প্রশ্ন শুনে সোমনাথবাবুর অভিযোগ, “দোলা আমাদের কর্মী ছিলেন। অর্থ ও ক্ষমতার লোভে আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। জিতে এলে এখানকার ভাল হবে না।” দোলা অবশ্য বলছেন, “এটা ওঁর ব্যক্তিগত মত। আমি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘতকতা করি না। আমার বিশ্বাস মানুষ মমতাকে সমর্থন জানাবেন।”
পাণ্ডবেশ্বর, উখরা, খান্দরা ও জামুড়িয়ার একটা অংশে অজয়ের তীরবর্তী এলাকায় সোমনাথবাবুদের সংগঠন সিপিআই (এমএল)-এর প্রভাব রয়েছে। তিনি নিজে ওই এলাকায় পড়ে থেকে সংগঠন করেন। তৃণমূলের একাংশের দাবি, সোমনাথবাবু ভাল করেই জানেন, দোলা সেন সাংসদ হলে ওই এলাকায় তাঁর সংগঠন মার খাবে। কারণ, দোলা ওই এলাকার নাড়ি-নক্ষত্র প্রায় সবই জানেন। তাই যে কোনও প্রকারে দোলাকে আটকানোই এখন সোমনাথবাবুর একমাত্র লক্ষ্য বলে তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন। তবে সোমনাথবাবু প্রকাশ্যে তাঁকে সমর্থন করায় সিপিএম কিছুটা স্বস্তিতে। সাংসদ বংশোগোপালবাবু বলেন, “সবাই মিলে একজোট হয়ে লড়ছি। আমাদের ফল ভালই হবে।”