অচিন্ত্য মল্লিক ও অমল হালদার (ডান দিকে)। ছবি: শৈলেন সরকার।
কারও বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা। কারও বিরুদ্ধে আবার বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা। এমনই নানা অভিযোগে সিপিএমের জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হল বেশ কয়েক জন প্রবীণ নেতাকে। এলেন নতুন কয়েক জন। এই পন্থা নিয়ে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ মতো কমিটি আকারেও ছোট করা গেল, আবার নতুন কিছু নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করে কমানো হল কমিটির গড় বয়সও।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগের জেলা কমিটি ছিল ৮১ জনের। তার মধ্যে এক অব্যাহতি নিয়েছেন, চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৭৬ জনের মধ্যে ১৩ জনকে এ বার বাদ দেওয়া হল। এলেন নতুন সাত জন। উঁচুতলা চাইছিল, নেতৃত্বে নতুন মুখ তুলে আনা হোক। কিন্তু এই জেলায় ১৩৫টি লোকাল কমিটির মধ্যে এ বার মাত্র ৫৮টিতে ও ২৭টি জোনাল কমিটির মধ্যে মাত্র ৮টিতে সম্পাদক পদে বদল আনতে পেরেছিল সিপিএম। জেলা কমিটিতে তাই কিছু নতুন মুখের অন্তর্ভুক্তিতে খানিকটা স্বস্তির ছাপ সিপিএম নেতাদের মুখে।
যে ১৩ জন কমিটি থেকে বাদ গেলেন তাঁদের মধ্যে দুর্গাপুর শহরেরই ৫ জন। প্রাক্তন মেয়র রথীন রায়, ডিপিএলের সিটু নেতা নরেন সিকদার, দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের পরাজিত প্রার্থী আলপনা চৌধুরী, সিটুর জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অজিত মুখোপাধ্যায় এবং দুর্গাপুর ১ (বি) প্রাক্তন জেনাল সম্পাদক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা, ব্যক্তিস্বার্থে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা, আক্রান্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে না দাঁড়ানো এবং এক জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অ-কমিউনিস্ট সুলভ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তাপস রায়, কাঁকসার কবিলাল মাড্ডি, বর্ধমানের গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর মুখোপাধ্যায়, গৌরহরি দত্ত, আবদুল মালেক, কালনার করুণা ভট্টাচার্য এবং মেমারির অরিন্দম কোনার। দলের বিদায়ী জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য বলেন, “নিজেরাই নতুনদের জায়গা করে দিতে সরে গিয়েছেন অনেকে। তাঁদের চার জনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে।” দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা হলেন দুর্গাপুরের রথীনবাবু, আসানসোলের তাপসবাবু, বর্ধমানের গৌরীবাবু এবং মেমারির অরিন্দমবাবু।
জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, গত বিধানসভা ভোটে ও পরের বছর দুর্গাপুর পুরভোটে যে ভাবে দল আত্মসমর্পণ করে সেখানে এমন একটা ঝাঁকুনি দরকার ছিল। তিনি বলেন, “দুর্গাপুরের ক্ষেত্রে তো বটেই, বর্ধমান শহরেও পুরভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কাছে যে ভাবে দল আত্মসমর্পণ করে, তা নজিরবিহীন। বয়স্ক ও নিষ্ক্রিয় সদস্যদের বাদ দিয়ে তুলনায় কমবয়সীদের নিয়ে আসায় আন্দোলন গতি পাবে।” সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা কমিটিতে নতুন আসা সাত জনের মধ্যে দু’জন গ্রামীণ বর্ধমানের মহিলা সদস্য মনিমালা দাস ও শান্তি মজুমদার। এ ছাড়া আসানসোলের মনোজ দাস, দুর্গাপুরের পঙ্কজ রায়সরকার, গলসির কমল সরকার, মেমারির সন্তু বন্দ্যোপাধ্যায় ও কালনার সুকুল সিকদার। তাঁদের বয়স মোটামোটি ৩২ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। যাঁরা বাদ গিয়েছেন তাঁদের সবাই ষাটোর্ধ্ব। দলীয় সূত্রের দাবি, এর ফলে সার্বিক গড় বয়স ৫৫ বছরের নীচে নেমে এসেছে। জেলার এক যুবনেতা অবশ্য বলেন, “আশা ছিল, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে আরও বেশি কমবয়সী মুখ জেলা কমিটিতে রাখা হবে। কিন্তু তা হল না। সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের বয়সের ধারা দেখেই তা আগাম আন্দাজ করা গিয়েছিল।” দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৫৩৯ জনের মধ্যে ৪০ বছরের কম বয়সের মুখ ছিলেন মাত্র ৪১ জন। ৪৬-৬০ বছরের ৩১৫ জন, ৬১-৭০ বছরের ১০২ জন ও সত্তোরর্ধ্ব ছিলেন ২৮ জন।
সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য এমন অভিযোগ আমল দিতে নারাজ। দলের বিদায়ী জেলা সম্পাদক অমলবাবু বলেন, “সব দিক বিবেচনা করে সব বয়সের, সমাজের সব স্তরের প্রতিনিধি রাখা রয়েছে কমিটিতে। সর্বসম্মতি ভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে।” সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, “জেলা কমিটির গড় বয়স কমিয়ে ফেলা গিয়েছে অনেকখানি। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ করবে নতুন কমিটি।”