বছর সাতেক আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, শহরাঞ্চলে সমস্ত শৌচাগার নির্মাণ করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। সেই নির্দেশ এখনও পুরোপুরি কার্যকর করে উঠতে পারেনি আসানসোল ও কুলটি পুরসভা। সে কারণে সরকারের সুসংহত জনস্বাস্থ্য রক্ষা কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আসানসোল মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
পুর এলাকায় বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার তৈরির দায়িত্ব মূলত পুরসভার। কিন্তু আসানসোল ও কুলটির বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই দুই এলাকায় পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই সেই কর্মসূচি কার্যকর হয়নি। আসানসোল শহর ও তার আশপাশে যেখানে একের পর এক বহুতল গড়ে উঠছে, তৈরি হচ্ছে ঝকঝকে শপিংমল ও নানা বিপণি, সেখানে শহরেরই কিছু জায়গায় অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার রয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে শহরবাসীর মধ্যেও।
পুরসভাগুলি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসানসোলে এখনও প্রায় তিনশো এবং কুলটিতে প্রায় সাতশো খাটা পায়খানা রয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় জনবহুল রাস্তার পাশেও এই ধরনের শৌচাগার দেখা যায় বলে শহরবাসীর অভিযোগ। শহরের প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএম নেতা তাপস রায়ের অভিযোগ, “বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শৌচাগার নির্মাণের সরকারি অনুদান ঠিক মতো ব্যবহার করা হয়নি।”
তবে এ বিষয়ে প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে নেই বলে দাবি করেছেন মহকুমাশাসক (আসানসোল) অমিতাভ দাস। তিনি বলেন, “জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি শৌচাগারগুলি পরিদর্শন করেছেন। আমরা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কিছু শৌচাগার ভেঙেছি। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কিছু এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।” আসানসোলের সদ্য প্রাক্তন মেয়র তথা পুরসভার বর্তমান প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার নির্মাণের জন্য আবেদনকারীদের প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাঁরা শৌচাগার তৈরি করবেন না, পুর কর্তৃপক্ষ তাঁদের পুরনো শৌচাগারগুলি ভেঙে দেবে। তাপসবাবু আরও জানান, শহরের বেশ কিছু এলাকায় বাড়ির মালিক-ভাড়াটে বিবাদের জেরে বিজ্ঞানসম্মত শৌচাগার তৈরি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “সেক্ষেত্রে আমরাই বাড়ির মালিকের আপত্তি না শুনে ভাড়াটেদের শৌচাগার বানিয়ে দেব।”
আসানসোল ও কুলটির বিস্তীর্ণ এলাকায় এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার দেখা যায়। আসানসোল পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনআর অঞ্চলে শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রবীন্দ্রভবনের উল্টো দিকে দক্ষিণ-পূর্ব রেললাইনের ধারেই রয়েছে এই ধরনের শৌচাগার। তার জেরে এলাকায় দূষণও ছড়াচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক দশক আগে তৈরি এই বস্তি অঞ্চলে গোড়া থেকেই এই ধরনের শৌচাগার রয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে শৌচাগার তৈরির পরামর্শ কেউ দেয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
পুরসভা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি শৌচাগার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কয়েক হাজার আধুনিক শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে আসানসোলের রেলপাড়, রাহা লেন, ডিপোপাড়া, বার্নপুরের নরসিংহবাঁধ, সুভাষপল্লি, কুলটির দক্ষিণ রানিতলা, মিঠানি, চিনাকুড়ি, নিয়ামতপুর, বরাকর-সহ বিভিন্ন এলাকায় এখনও এমন শৌচাগার রয়েছে বহু। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেগুলি উচ্ছেদের পরিকল্পনা হয়েছে।
কবে সেই কাজ শেষ হবে, এখন সেই অপেক্ষায় শহরবাসী।