নানা সমস্যায় ফেঁসে তৃণমূল, সম্মেলন সেরে নিল সিপিএম

২০১১-র পরে তৃণমূলের সন্ত্রাসে বহু জায়গায় লোকাল কমিটির সম্মেলন করতে না পারার অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। অভিযোগ ছিল পুলিশের অসহযোগিতারও। তবে তিন বছরের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। সিপিএমের দাবি, সারদা থেকে খাগড়াগড়, একের পর এক ঘটনায় তৃণমূলের আক্রমণ ভোঁতা হয়েছে। আবার দিনের পর দিন দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে এ বছর কেতুগ্রামের ২টি লোকাল কমিটি ছাড়া জেলার বাকি ১৩১টি লোকাল সমিটির সম্মেলন নির্বিঘ্নে এলাকার মধ্যেই করা গিয়েছে বলে সিপিএমের দাবি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

২০১১-র পরে তৃণমূলের সন্ত্রাসে বহু জায়গায় লোকাল কমিটির সম্মেলন করতে না পারার অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। অভিযোগ ছিল পুলিশের অসহযোগিতারও। তবে তিন বছরের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। সিপিএমের দাবি, সারদা থেকে খাগড়াগড়, একের পর এক ঘটনায় তৃণমূলের আক্রমণ ভোঁতা হয়েছে। আবার দিনের পর দিন দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে এ বছর কেতুগ্রামের ২টি লোকাল কমিটি ছাড়া জেলার বাকি ১৩১টি লোকাল সমিটির সম্মেলন নির্বিঘ্নে এলাকার মধ্যেই করা গিয়েছে বলে সিপিএমের দাবি। ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিটি গ্রামে নির্দিষ্ট কর্মসূচি সামনে রেখে পথে নামতে হবে। আক্রান্ত হলেও পিছিয়ে আসা যাবে না। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, “গ্রামে বিজেপি বাড়ছে, আর আমাদের লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় রাস্তায় নামা ছাড়া বিকল্প পথ নেই।”

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, ২০১১ সালে বর্ধমান জেলায় শুধু লোকাল কমিটির সম্মেলন নয়, জোনাল কমিটির সম্মেলনও স্থানান্তরিত করতে হয়েছিল। কেতুগ্রাম ১ ব্লকের দুটি সম্মেলন তো বটেই, রায়না, খণ্ডঘোষ, ভাতার, বর্ধমান সদর সহ বেশ কিছু এলাকায় গত বার লোকাল কমিটি ও জোনাল কমিটির সম্মেলন করা যায়নি বলেও দলীয় সূত্রে খবর। সেই সময় তৃণমূল যেখানে সন্ত্রাস করে সম্মেলন বন্ধ করতে পারেনি, সেখানে পুলিশ দিয়ে বন্ধ করিয়ে দেয় বলেও সিপিএমের দাবি। যেমন, রায়নার উচিতপুরে একটি লোকাল কমিটির সম্মেলন চলাকালীন পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। পুলিশের অবশ্য অভিযোগ ছিল, অনুমতি না নিয়ে মাইক বাজানো হচ্ছিল ওই সম্মেলনে। তবে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “আমাদের নিজস্ব সাংগঠনিক সম্মেলন, চার দেওয়ালের ভিতর সম্মেলন হয়, সেখানে মাইক বাজানোর অনুমতি নিতে হবে কেন?” এ বারও পুলিশ সম্মেলনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে চায়নি বলে তাঁর অভিযোগ। অচিন্ত্যবাবুর দাবি, বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলনস্থলের কাছে রাতভর বোমাবাজি করেছে তৃণমূল। তবে তার মধ্যেও আউশগ্রামের বননবগ্রামের উত্তর লোকাল কমিটির মতো বেশ কয়েকটি লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়েছে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “২০১১ সালে বর্ধমান গ্রামীণ এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোকাল কমিটির সম্মেলন অন্যত্র করা হয়েছিল। এ বার সেখানে কেতুগ্রামের দুটি লোকাল কমিটি ছাড়া কোথাও সম্মেলন সরাতে হয়নি।” দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান সদরের লোকাল কমিটির সম্মেলন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে নির্দিষ্ট জায়গাতেই সম্মেলন করা হবে বলে সিপিএম নেতারা জানিয়েছেন।

কিন্তু তিন বছরে পরিস্থিতির এতটা বদল কেন? সিপিএমের ব্যাখ্যা, সারদা-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল কার্যত দিশেহারা। নিচুতলার কর্মীরাও বিভ্রান্ত। একের পর এক নেতার নাম উঠে আসায় শাসকদলের নিচু তলার নেতা-কর্মীরা বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারছেন। ফলে রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ছে শাসকদল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাফল্য পাওয়ার পরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে গিয়েছে বলেও সিপিএমের দাবি। তৃণমূলের আক্রমণে পিঠ ঠেকে যাওয়া দলের কর্মী-নেতারাও এককাট্টা হয়ে প্রতিরোধ করার মানসিকতা তৈরি করছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিক ভাবে সেই পরিবেশকে কাজে লাগাতে হবে।” তৃণমূল-বিরোধী পরিবেশকে কাজে লাগাতে না পারলে পালের হাওয়া বিজেপি কেড়ে নিতে চলেছে তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে সিপিএম।

Advertisement

তবে জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ সিপিএমের কোনও অভিযোগই মানতে চাননি। তিনি বলেন, “সিপিএমের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আগে কেন ওরা সম্মেলন করতে পারেনি, এখন কীভাবে করতে পারছে সেটা পুরোটাই ওদের বিষয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement