আসানসোলের গারুইয়ে নেশামুক্তি কেন্দ্র।
নেশা করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যেতে হত জেলে। সেখান থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার নেশায় ডুবে যেতেন তাঁরা। শুধু গ্রেফতার করে নেশামুক্তি ঘটানো যাচ্ছে না দেখে চিন্তায় পড়ে পুলিশ। কী ভাবে এই নেশাগ্রস্তদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই উপায় খোঁজা শুরু হয়। পুলিশকে সেই উপায় বাতলে দেন শহরেরই এক যুবক। তাঁর পরামর্শ মতোই নেশামুক্তি কেন্দ্র তৈরি করে ফেলেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।
আসানসোল শহরের উপকণ্ঠে গারুই গ্রামে পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে এই কেন্দ্র। একটি দোতলা বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে সে জন্য। আর সেখানকার কাজকর্ম একা হাতে সামলাচ্ছেন সেই যুবক মণীশ মহেশকা। কেন দিনরাত এক করে পড়ে রয়েছেন এখানে? কারণটা জানালেন মণীশ নিজেই। তিনি জানান, নিজে এক সময়ে মাদকাসক্তির খপ্পরে পড়েছিলেন। বহু চেষ্টা করেও আত্মীয়-পরিজনেরা সেই নেশা থেকে মুক্ত করতে পারছিলেন না তাঁকে। মণীশ বলেন, “নিজেও ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। অবশেষে ভিন্ রাজ্যের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয় আমাকে। সেখান থেকে ভাল হয়ে ফেরার পরেই ঠিক করি, নিজের শহরে এই রকম একটি কেন্দ্র তৈরি করে মাদকাসক্তদের নেশামুক্ত করার চেষ্টা করব।”
মণীশ মহেশকা।
মণীশ এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনারকে। এই রকম একটি উদ্যোগের কথা ভাবছিল পুলিশও। তাই কাজ শুরু করতে দেরি হয়নি। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে ৪৩ জন রয়েছেন সেখানে। এর মধ্যে পুলিশের তরফে পাঠানো হয়েছে ২৫ জনকে। কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা জানান, কুলটির যৌনপল্লি এলাকা, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া দুর্গাপুর থেকে মাদকাসক্তদের এখানে পাঠানো হয়। বাকি ১৮ জনকে রেখে গিয়েছেন আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিরা। মণীশকে নানা কাজে সাহায্য করতে রয়েছেন সাত জন স্বেচ্ছাসেবক। মণীশ জানান, ইতিমধ্যে এখান থেকে ৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, এখানে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁদের সকাল-বিকেল যোগব্যায়াম, খেলাধুলো, নানা বিষয়ে আলোচনা, ব্যক্তিত্ব বিকাশের শিক্ষা দেওয়া হয়। দেখা হয় যাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে যত বেশি সম্ভব কথাবার্তা বলেন। তাতে কেউ একাকিত্বে ভুগবেন না।
কেন্দ্রের খরচ আসছে কোথা থেকে? জানা গিয়েছে, পুলিশ কিছু অর্থ সাহায্য করে। এ ছাড়া শহরের কিছু শুভানুধ্যায়ী সাহায্য করেন। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের মূল স্রোতে ফেরানোই লক্ষ্য।” আর মণীশ বলেন, “আমি নিজে এক সময়ে নেশার কবলে পড়েছিলাম বলেই ওঁদের অবস্থাটা বুঝতে পারি। তাই সহজে সমস্যার ভিতরে গিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারি। এটা করতে পেরে খুব ভাল লাগছে।”
ছবি দু’টি তুলেছেন শৈলেন সরকার।