তুহিন-হত্যাকে ব্যবহার তৃণমূলের, ক্ষুব্ধ কংগ্রেস

দেওয়াল লিখন, ব্যানার, পোস্টারের মধ্যে কাটোয়ার নিহত কংগ্রেস কর্মী তুহিন সামন্ত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রচার করছে তৃণমূল। প্রচারসভায় তৃণমূল নেতারা দাবি করছেন, তুহিন হত্যায় সরাসরি ইন্ধন ছিল বর্ধমান-পূর্বের বাম প্রার্থী ঈশ্বরবাবুর। কিন্তু তুহিনবাবুর দল, কংগ্রেস অবশ্য এই ইস্যুটিকে প্রচারে ব্যবহার করতে নারাজ।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩১
Share:

দেওয়াল লিখন, ব্যানার, পোস্টারের মধ্যে কাটোয়ার নিহত কংগ্রেস কর্মী তুহিন সামন্ত হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রচার করছে তৃণমূল। প্রচারসভায় তৃণমূল নেতারা দাবি করছেন, তুহিন হত্যায় সরাসরি ইন্ধন ছিল বর্ধমান-পূর্বের বাম প্রার্থী ঈশ্বরবাবুর। কিন্তু তুহিনবাবুর দল, কংগ্রেস অবশ্য এই ইস্যুটিকে প্রচারে ব্যবহার করতে নারাজ।

Advertisement

সম্প্রতি, বর্ধমানের সাতগেছিয়া বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলের বর্ধমান (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি ও মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ঈশ্বরবাবুকে আক্রমণ করেন। মঞ্চে এক গোছা কাগজ তুলে ধরে ঈশ্বরবাবুর নাম না করে তিনি বলেন, “বাম আমলে কাটোয়াতে এক কলেজ শিক্ষককে হত্যা করে হয়েছিল। তাতে জড়িত ছিলেন এই নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী। বাম আমলের পুলিশই চার্জশিটে তাঁর নাম রেখেছে। এই হল সেই চার্জশিট।” স্বপনবাবুর দাবি, অভিযুক্তদের তালিকায় আট নম্বরে নাম রয়েছে ঈশ্বরবাবুর।

২০০৭ সালে কাটোয়ার চাণ্ডুলিতে স্কুল ভোট চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল কংগ্রেস কর্মী পেশায় কলেজ শিক্ষক তুহিন সামন্তের। সেই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল বাম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস কয়েক জন সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে ওই মামলার চার্জগঠন করা হয়। এ বছরের ২২ মে ওই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা।

Advertisement

জেলা কংগ্রেস নেতা তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তুহিন সামন্ত হত্যার ঘটনাটি বেশ পুরনো। বিষয়টি বর্তমানে আদালতের বিচারাধীন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ রয়েছে, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে প্রচার করা যাবে না। তাই আমরা ওই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছুই বলছি না।” তুহিনের বিষয়ে তৃণমূলের প্রচারকে ‘নির্বাচনী চমক’ বলেই ব্যাখা করছেন জেলার কংগ্রেস নেতারা। জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, আভাষ ভট্টাচার্যদের অভিযোগ, “তুহিন সামন্তের স্ত্রী নিষাদ সামন্ত পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল নিষাদদেবীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল। এখন তুহিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভোটের বাজারে ফায়দা তুলতে চাইছে তৃণমূল।”

গত ২৮ মার্চ তুহিনবাবুর বাড়ি ছুঁয়েই কাটোয়াতে প্রচার শুরু করেন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। সে দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন বর্ধমান (গ্রামীণ) জেলা তৃণমূল সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তুহিনবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছবিতে মালা দেন তাঁরা। কথা বলেন তুহিনবাবুর স্ত্রী ও বর্তমানে কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস কর্মাধ্যক্ষ নিষাদ সামন্তর সঙ্গে। তৃণমূল প্রার্থী নিষাদদেবীর কাছ থেকে নির্বাচনে ‘সহযোগিতা’ চান। তৃণমূলের দাবি, তুহিন সামন্ত হত্যাকাণ্ডের দোষীদের বিচারের দাবিতে শুরু থেকেই আন্দোলন করছ তাঁরা। দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম জার্জিসের দাবি, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট ছিল না। তাই সাংগাঠনিক কারণেই আমাদের নিষাদদেবীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে হয়েছিল।”

তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের এই প্রচারকে অবশ্য একদমই গুরুত্ব দিচ্ছেন না বাম প্রার্থী ঈশ্বরবাবু। তাঁর দাবি, “এলাকার মানুষ খুব ভালভাবেই জানেন যে, সে দিন কী হয়েছিল। তাই আমরা গত দু’বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই এলাকায় আমরা প্রায় সব ক’টি আসনেই জিতেছিলাম। এ বারও জিতব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement