শোকস্তব্ধ মৃত ডিএসপি কর্মীর স্ত্রী-মেয়েরা
ডিএসপি-র এক কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হল দুর্গাপুরের এনার্জি পার্কের সামনের মাঠ থেকে। সোমবার রাতে কারখানার কাজ সেরে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। মঙ্গলবার সকালে তাঁর দেহ মেলে। তিনি খুন হয়েছেন বলে পুলিশের অনুমান। তবে কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সঞ্জিতকুমার প্রসাদ (৪০)। তিনি ডিএসপি-র ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কর্মী ছিলেন। থাকতেন ইস্পাতনগরীর সেকেন্ডারি এলাকায়। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরের পালিতে কাজ করতে কারখানায় যান সঞ্জিতবাবু। কাজ শেষ করে সময় মতো তিনি কারখানা থেকে বেরোন। কিন্তু বাড়ি না ফেরায় তাঁকে ফোন করেন স্ত্রী নীলমদেবী। তখন তিনি জানান, বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হবে। তার পরেও অনেক রাত পর্যন্ত সঞ্জিতবাবু না ফেরায় তাঁকে আবার ফোন করেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু আর ফোনে পাওয়া যায়নি। সঞ্জিতবাবুর বাড়ির লোকজন কয়েক জন সহকর্মীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আত্মীয়স্বজন থেকে বন্ধুবান্ধবদেরও বাড়িতে ফোন করে খোঁজ করা হয়। কিন্তু কোথাও তাঁর হদিস মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে সিটি সেন্টার লাগোয়া এনার্জি পার্কের সামনের মাঠে স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা দেখতে পান, রক্তাক্ত একটি দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁরা এলাকার বাসিন্দাদের তা জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। দেহের পাশে একটি রক্তমাখা জ্যাকেট উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া দেহের পাশ থেকে তিনটি রক্তমাখা ছুরি, একটি লোহার চেন ও তিনটি জলের বোতলও উদ্ধার করে পুলিশ। কুকুর এনেও তদন্ত করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ওই জায়গাতেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। দেহ ফরেন্সিক পরীক্ষা ও ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোলে পাঠানো হয়। নিউটাউনশিপ থানায় নিহতের স্ত্রী একটি খুনের অভিযোগ করেন।
এ দিন বিকেলে সঞ্জিতবাবুর সেকেন্ডারির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির সামনে প্রতিবেশীর ভিড়। গোটা পাড়ায় শোকের ছায়া। আপাত নিরীহ মানুষটির এ ভাবে মৃত্যুর পিছনে কারণ কী, কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না। অন্য দিনের মতো সোমবারও সঞ্জিতবাবু মোটরবাইকে করে কাজে গিয়েছিলেন বলে জানান তাঁর মামা জনার্দন প্রসাদ। সেই মোটরবাইকটিও পাওয়া যাচ্ছে না। জনার্দনবাবুর কথায়, “কারখানা থেকে বেরিয়ে স্ত্রীকে বলেছিল, যেতে দেরি হবে। কারও সঙ্গে কোথাও যাচ্ছে কি না সে সব জানায়নি।” সঞ্জিতবাবুর স্ত্রী নীলমদেবী কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাঁদের দুই মেয়ে এক জনের বয়স ১২ বছর ও অন্য জনের ৫ বছর। প্রতিবেশী কালাচাঁদ ঘোষ, আরপি সিংহেরা বলেন, “পাড়ার কারও সঙ্গে কোনও দিন ঝগড়া-ঝামেলা হয়নি সঞ্জিতবাবুর। খুব একটা কথাও বলতেন না। তাঁর এমন পরিণতিতে আমরা হতবাক।”
যেখানে সঞ্জিতবাবুর দেহ মেলে তা তাঁক কর্মস্থল থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে। কারখানা থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তায় তিনি গেলেন কেন, সে নিয়েও ধন্দে পুলিশ। সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।