জলের ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। এ কথা শুনেই পিছিয়ে যাচ্ছেন অনেক ক্রেতা। শহর আকারে বাড়ছে। বাইরে থেকে লোকজন আসার হারও বাড়ছে। একের পর এক আবাসন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। কিন্তু যে ধরনের চাহিদা তাঁরা আশা করেছিলেন, তেমনটা হচ্ছে না বলে দাবি আসানসোলের প্রোমোটারদের। আর এর পিছনে অন্যতম বড় কারণ শহরের জলসমস্যা, অভিযোগ তাঁদের। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, শহরের দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সমস্যা মিটবে।
আসানসোলে ১৯৮৭ সালে প্রথম আবাসন নির্মাণ করেন হরিনারায়ণ মিশ্র। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ২৬০০ ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন। ২৭ বছর আগে যে এলাকায় ১৮০ টাকা বর্গফুট দরে ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিলেন, সে সব জায়গায় এখন সেই দর দু’হাজার টাকার চেয়েও বেশি। ১৯৯৮ সালে ছ’জন প্রোমোটারকে নিয়ে গড়ে ওঠে ‘আসানসোল রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এখন তাদের সদস্য সংখ্যা ৬০ জন। এ ছাড়া আরও জনা চল্লিশ প্রোমোটার এই শহরে আবাসন নির্মাণ করছেন। বর্তমানে প্রায় ৪০টি আবাসন প্রকল্পের কাজ চলছে আসানসোলে।
হরিনারায়ণবাবু জানান, গত পাঁচ বছরে সিমেন্টের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ইটের দাম বেড়েছে দেড় গুণেরও বেশি। কিন্তু শহর উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের যে রকম চাহিদা হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। তাঁর দাবি, “কাউকে জলের সংযোগের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তা সত্ত্বেও যাঁরা ব্যবসা ফেঁদেছেন বা চাকরি করতে এসেছেন, তাঁরা বাধ্য হয়ে ফ্ল্যাট কিনছেন। বাকিরা দুর্গাপুরের দিকে চলে যাচ্ছেন।”
প্রোমোটারদের ওই সংগঠনের সভাপতি অমিয় লায়েক জানান, এমন অনেক আবাসন আছে যেখানে দেড়-দু’বছর আগে বসবাস শুরু করেছেন মানুষ। কিন্তু এখনও জলের সংযোগ মেলেনি। কুয়ো, চাপাকলই ভরসা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক বুলু চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন সভাপতি শচীন রায়দের আশা, “পুরসভার দ্বিতীয় জলপ্রকল্প চালু হলে এই ব্যবসায় আবার জোয়ার আসবে।” সংগঠনের বর্তমান সম্পাদক বিনোদ গুপ্ত অবশ্য মনে করেন, শুধু জল সমস্যা মিটলেই হবে না। চাহিদা বাড়াতে গেলে স্বাস্থ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে আরও উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, “আগে আবাসন প্রকল্পের নির্মাণ চলাকালীনই সব ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে যেত। এখন আর হচ্ছে না। সময় লাগছে।” এই পরিস্থিতিতেও গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩০ জন নতুন প্রোমোটার এই শিল্পে যোগ দিয়েছেন জানিয়ে বিনোদবাবু আশা প্রকাশ করেন, আসানসোলে বিশ্ববিদ্যালয় চালু-সহ নানা কারণে নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়বে। তাতে তাঁদের শিল্পও উপকৃত হতে পারে।
আসানসোলে রাজ্য সরকার হাউসিং বোর্ডের মাধ্যমে কল্যাণপুরে হাউসিং এস্টেট নির্মাণ করে। তার পরে উপনগরী এবং কল্যাণপুর ‘স্যাটেলাইট টাউন’ নির্মাণ গড়া হয়। সে সব ক্ষেত্রে এডিডিএ-র জমিতে বহিরাগত বেসরকারি ঠিকা সংস্থা কাজ পেয়েছে। হরিনারায়ণবাবুর দাবি, “আমরা অতীতে এডিডিএ-র কাছে এ ধরনের প্রকল্পের কাজের জন্য জমি চেয়েছি। দেওয়া হয়নি।” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি এই ধরনের দাবির কথা শুনিনি। কাজ দরপত্রের মাধ্যমেই দেওয়া হয়।”
কল্যাণপুর স্যাটেলাইট টাউনশিপের বাসিন্দারাও জল নিয়ে সমস্যায়। এক বাসিন্দা তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “যে জল মেলে তা অপর্যাপ্ত। জল কিনতে হয়। গরমে তো এক ট্যাঙ্ক জল মেলে ২৫০ টাকায়!” শহরের নানা আবাসনের বাসিন্দা অরূপ গোপ, লক্ষ্মীকান্ত চট্টোপাধ্যায়দের কথায়, “জল নিয়ে সকলেই খুব বিপাকে। কবে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে, কে জানে!”
আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, সামগ্রিক ভাবে জল সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। দ্বিতীয় জলপ্রকল্পটি চালু হয়ে গেলে সমস্যা মিটবে বলে আশাবাদী তাঁরাও।