জল-বিদ্যুৎ পায় না কুষ্ঠ কলোনি

বিদুৎ থেকে পাকা রাস্তা কিছুই নেই। গৃহ-ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় নেই বাড়ির দলিলও। এমনই অনেক নেই রাজ্যের মধ্যে বাস করছেন জামুড়িয়ার দু’টি কুষ্ঠ কলোনির বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করেও সমস্যার সুরাহা হয়নি।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০১:১৫
Share:

জামুড়িয়ার একটি কলোনি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

বিদুৎ থেকে পাকা রাস্তা কিছুই নেই। গৃহ-ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় নেই বাড়ির দলিলও। এমনই অনেক নেই রাজ্যের মধ্যে বাস করছেন জামুড়িয়ার দু’টি কুষ্ঠ কলোনির বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে বারবার দরবার করেও সমস্যার সুরাহা হয়নি।

Advertisement

১৯৮৩ সালে তৎকালীন গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে রাজ্য সরকার জামুড়িয়া বাজারের অদূরে তৈরি করে নেতজি কুষ্ঠ কলোনি। কলোনি উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক গণেশ ঘোষ জানান, সরকারি উদ্যোগে ৩০টি ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়। পরে আরও ৪টি বাড়ি তৈরি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরনো সবকটি বাড়িই বর্তমানে বেহাল। জামুড়িয়া পুরসভার মাধ্যমে বিএসইউপির প্রকল্পের অধীনে ২৮টি নতুন বাড়ি তৈরি করা হয়। কিন্তু পুরনো বাসিন্দাদের মধ্যে ৬ জন এখনও নতুন বাড়ির চাবি হাতে পাননি বলে কমিটির সূত্রে জানা গেল। এলাকার বাসিন্দা বংশী ঘোষ, মানিক মোদকরা জানান, শিশুদের নিরাপদে খেলার জন্য কলোনিতে একটি ঘেরা পাঁচিল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও প্রশাসনের তরফে তা করা হয়নি। কোনও পাঁচিল না থাকায় কলোনিটি বর্তমানে শহরের বড় রাস্তার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কলোনির ভিতরের রাস্তা পাকা না হওয়ায় বর্ষায় যাতায়াত করতেও অসুবিধায় পড়তে হয় বলে জানান কলোনির বাসিন্দারা। মানিকবাবুদের অভিযোগ, কলোনির অদূরে বিদ্যুত থাকলেও এখনও আমরা আলো পায়নি। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাও তেমন মেলে না বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের ভরসা একমাত্র আসানসোলের মিশনারিজ অফ চ্যারিটি। চ্যারিটির তরফে বাসিন্দাদের ওষুধের জোগান দেওয়া হয়। গণেশবাবু জানান, বিএসইউপি প্রকল্পে বাড়ি পেতে কলোনির অনেকে গৃহঋণ নেন। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলি ওই ঋণের মাসিক ৫০০ টাকা কিস্তি এক বা দু’বারের বেশি জমা দিতে পারেনি। এর জেরে ওই পরিবারগুলি এখনও জমির দলিল হাতে পায়নি বলে গণেশবাবুর অভিযোগ। কংগ্রেস নেতা বিশ্বনাথ যাদবের দাবি, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওঁদের গৃহ-ঋণ মুকুবের আবেদন জানিয়ে আসছি।” পুরপ্রধান রাজশেখর মুখোপাধ্যায় যদিও বলেন, “কলোনিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার কাজও দ্রুত শেষ হবে। বিধায়ক তহবিল ও পুরসভা থেকে গৃহঋণ মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”

জামুড়িয়ার আরও একটি কুষ্ঠ কলোনি গড়ে ওঠে চাকদোলা মোড়ের কাছে। কলোনির প্রবীণ বাসিন্দা বৈদ্যনাথ দাস জানান, প্রথমে চাকদোলা মোড় সংলগ্ন নীচে পাড়ায় ১৬টি পরিবার ঝুপড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরপর ২০১১-১২ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকার তিন একর জমির ব্যবস্থা করে। সেখানে ইসিএল ৬টি ও জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতি ১২টি বাড়ি তৈরি করে দেয়। এই কলোনিতেও নাগরিক পরিষেবার বেহাল ছবিটা একই রকম। কলোনির পানীয় জলের ভরসা বলতে দু’টি চাপা কল ও একটি কুয়ো। বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেল, একটি কলে জল পড়ে না। বিদ্যুতের সংযোগও মেলেনি। রাস্তাও কাঁচা। পঞ্চায়েত সমিতি দুটি শৌচাগার তৈরি করে দিলেও নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় তা ব্যবহার করা যায় না বলে জানান কলোনির বাসিন্দা নারায়ণ দাস, রাধারানি রায়, আনন্দ বাগ্দিরা। বর্ষা এলেই বাড়ির চাল চুঁইয়ে জল পড়াও দস্তুর হয়ে পড়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। কলোনি রাস্তায় ৮টি সোলার লাইট চোখে পড়ল। কিন্তু সন্ধ্যে নামতেই মাত্র দু’টি আলোয় জ্বলে উঠল। শুধু তাই নয়, কলোনির জমি দখল করে এক ভাটা-মালিক মাটি মজুত করে রাখেন বলেও অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার অভিযোগ, ওই ভাটা-মালিকের অনুগামীদের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারি না। যদিও কলোনির সমস্যাগুলির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না দাবি করে আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসের আশ্বাস, “সোমবার ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের ওই এলাকায় পাঠাব। তাঁদের রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement