মোবাইল টাওয়ার থেকে ছড়ায় দূষণ। দেখা দেয় নানা শারীরিক সমস্যা। এই অভিযোগে এলাকায় নির্মীয়মাণ মোবাইল টাওয়ার সরানোর দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের ননকোম্পানি এলাকার বাসিন্দারা। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত জানান, এ ব্যাপারে পরিবেশ দফতরের কাছে রির্পোট চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ননকোম্পানি এলাকার সেল কো-অপারেটিভ হাউসিং কমপ্লেক্স এলাকার তারাশঙ্কর সরণির একটি বাড়ির ছাদে একটি মোবাইল সংযোগদাতা সংস্থার টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরুর পরেই হাউসিং কমপ্লেক্স সোসাইটির তরফে পাড়ায় এই টাওয়ার বসানোর ব্যাপারে আপত্তি জানানো হয়। সোসাইটির সভাপতি বাদল মজুমদারের অভিযোগ, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এই ধরনের টাওয়ার থেকে নানা সমস্যা তৈরি হয়। তাই এই কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছি।” স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পরিবেশ মন্ত্রকের নির্দেশ অমান্য করে বাড়ির ছাদে টাওয়ার বসানো যাবে না। যদি একান্তই টাওয়ার বসাতে হয়, তা জনবসতিহীন জায়গায় বসাতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা বিএন মণ্ডল বলেন, “এলাকায় বহু বয়স্ক মানুষ এবং শিশু থাকেন। আমরা চাই, তাঁদের কথা ভেবে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।”
মোবাইল টাওয়ার থেকে বেরোনো তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ থেকে কী কী ক্ষতি হতে পারে, সে বিষয়ে সমীক্ষার জন্য টেলিকম, পরিবেশ এবং জৈব-প্রযুক্তি মন্ত্রকের কর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১২ সালের মাঝামাঝি রিপোর্ট দিয়েছিল এই কমিটি। তাতে বলা হয়েছিল, জনবসতির মধ্যে থাকা টাওয়ারগুলি থেকে যে বিকিরণ হয়, মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রে তার কুপ্রভাব পড়ে। দেখা দেয় অবসাদ। কমে যায় স্মৃতিশক্তি ও হজমের ক্ষমতা। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতীদের। শুধু মানুষ নয়, মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ প্রভাব ফেলে পশুপাখির উপরে। ওই কমিটি জনবহুল এলাকা থেকে মোবাইল টাওয়ার সরিয়ে ফেলা অথবা তাদের শক্তি কমানোর পরামর্শ দিয়েছিল।
টেলি সংযোগ সংস্থার আধিকারিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেক্ষিতে পরিষেবার মান উন্নত করতে আরও বেশি সংখ্যায় মোবাইল টাওয়ার বসাতে হবে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টাওয়ারের বিকিরণের মাত্রা কমানোর বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। যে টেলি যোগাযোগ সংস্থা ননকোম্পানি এলাকায় মোবাইল টাওয়ারটি বসাচ্ছে, সেই সংস্থার দুর্গাপুরের এক আধিকারিক জানান, কোথাও মোবাইল টাওয়ার বসানোর আগে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। ওই এলাকায় টাওয়ার বসানোর ক্ষেত্রে সে সব হয়েছে কি না সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে।দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। পরিবেশ দফতরের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। সেটা পেলে দু’পক্ষকে শুনানিতে ডাকব। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”