ধৃত ব্যাঙ্ক কর্মী। নিজস্ব চিত্র।
ভুয়ো চালকলের নামে ঋণ মঞ্জুর করে তিন কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে ধরা পড়লেন এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার শেক্সপিয়ার সরণি থেকে অতনু গোস্বামী নামে ওই কর্মীকে গ্রেফতার করেন গুসকরা থানার এসআই সঞ্জয় ওরাং। বর্তমানে ওই ব্যাঙ্কের কলকাতার বেলঘরিয়া শাখার ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন অতনুবাবু।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সূত্রপাত ২০১১ সালের শেষ দিকে। তখন ওই ব্যাঙ্কের গুসকরা শাখার ম্যানেজার ছিলেন অতনুবাবু। অভিযোগ, তখনই শ্যামসুন্দরের বাসিন্দা সাকির মল্লিক চালকলের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। অতনুবাবুর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সাকির তিন কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার আবেদন জানান অতনুবাবুর কাছে। কিন্তু ঋণ মঞ্জুর হয়নি। পরে সাকিরকে দিয়ে একটি ভুয়ো চালকলের নথিপত্র ব্যবহার করে ব্যাঙ্কের মেমারি শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলান অতনুবাবু। ওই অ্যাকাউন্টেই দফায়-দফায় মোট তিন কোটি টাকা পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। মেমারি শাখার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে সাকির সমস্ত টাকা তুলে নেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ব্যবসা দেখিয়ে তড়িঘড়ি ওই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ঋণ যে দেওয়া হয়েছে, নথিতে তার কোনও উল্লেখ ছিল না। পরে নতুন ম্যানেজার ওই শাখার দায়িত্বে আসার পরে দেখা যায়, তিন কোটি টাকার কোনও হিসেব নেই। কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্তারা এসে বারবার অতনুবাবুকে ডেকে ওই ব্যাপারে জেরা করেন। শেষে তাঁরা নিশ্চিত হন সাকিরকে বেআইনি পথে ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন অতনুবাবু। এরপরেই অতনু গোস্বামী ও সাকিরের বিরুদ্ধে গুসকরা ফাঁড়িতে বৃহস্পতিবার এফআইআর দায়ের করেন নতুন ম্যানেজার অনির্বাণ সেনগুপ্ত। অতনুবাবুর টিটাগড়ের বাড়িতে হানা দিয়েও কিছু চেক ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার ধৃতকে সিজেএম আদালতে তোলা হলে তার সাত দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ওই ভুয়ো চালকলের মালিক সাকির মল্লিককেও খুঁজছে পুলিশ। সাকিরের বাড়ি রায়নার শ্যামসুন্দরে। তবে পুলিশ সেখানে হানা দিয়ে তাঁর হদিশ পায়নি বলে পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মেদ হোসেন মির্জা জানিয়েছেন।
পুলিশের দাবি, জেরায় অতনুবাবু লেনদেনের ব্যাপারে তার যোগের কথা অস্বীকার করেছেন। তবে এই চক্রে আরও কয়েকজন ব্যাঙ্কের কর্মী জড়িত রয়েছেন বলে পুলিশের সন্দেহ। বিস্তারিত তদন্তের জন্য ধৃতকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে নতুন করে জেরা করে হবে বলে এসপি জানিয়েছেন।