শিক্ষার অধিকার আইন চালুর পরে কেটে গিয়েছে চার বছর। স্কুলছুটদের ফেরাতে নানা রকম উদ্যোগ হয়েছে। তা সত্ত্বেও বর্ধমান জেলায় সব স্কুলছুটকে এখনও ফেরানো যায়নি স্কুলে। সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে এই তথ্য। আগামী মাসখানেকের মধ্যে স্কুলের বাইরে থাকা এই সব ছেলেমেয়েকে ফেরানো হবে জানিয়ে জেলা সর্বশিক্ষা দফতরের প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, “সার্বিক ভাবে উদ্যোগ হয়েছে। স্কুলছুটের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা একমাত্র লক্ষ্য।” যদিও স্কুলছুটের সংখ্যা একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব, এ কথা মানতে নারাজ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও স্কুলছুটদের নিয়ে কাজ করা নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
জেলা সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন একটি সমীক্ষা চালায়। শিক্ষক, পার্শ্বশিক্ষক, শিক্ষাকর্মীসকলে মিলে সমীক্ষাটি সম্পন্ন করেন। সেখানে দেখা যায়, এই জেলায় স্কুলের বাইরে রয়েছে এমন পড়ুয়ার সংখ্যা ৯ হাজারেরও বেশি। এর পরেই নড়েচড়ে বসে জেলা সর্বশিক্ষা দফতর। স্কুলছুট বাচ্চাদের স্কুলমুখী করার বিশেষ অভিযান হাতে নেয় জেলা সর্বশিক্ষা মিশন। দু’ভাবে কাজ শুরু হয়। প্রথমত, বেশ কিছু দিন ধরে স্কুলের বাইরে রয়েছে, এমন পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। লক্ষ্য, যাতে স্কুলে গিয়ে তারা পিছিয়ে না পড়ে। দ্বিতীয়ত, স্কুলে ঢোকার আগে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তাদের হাতে বই, খাতা, পেন, পেনসিল তুলে দেওয়া।
জেলা সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬ বছর থেকে ১৪ বছরের মধ্যে প্রতিটি পড়ুয়াকে স্কুলের আঙিনায় টেনে আনার লক্ষ্যে ধারাবাহিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, সাধারণত দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা বেশি। সে কথা মাথায় রেখে এই তিন শ্রেণির পড়ুয়াদের উপরে বাড়তি নজর দিতে শুরু করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। প্রকল্প আধিকারিক ভাস্করবাবু জানান, লাগাতার উদ্যোগের পরে ক্রমশ স্কুলছুটের সংখ্যা কমতে শুরু করে। মাসখানেক আগে সংখ্যাটা হাজারে নেমে আসে। এখন তা আরও কমে গিয়েছে।
সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর সমীক্ষার কাজ এখনও শুরু হয়নি। জেলা প্রকল্প আধিকারিক ভাস্করবাবু বলেন, “এখনকার হিসেবে ৬৬২ জন পড়ুয়া এখনও স্কুলের বাইরে রয়ে গিয়েছে। দ্রুত তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা চাই, এ বারের সমীক্ষায় যেন সেই ছবি ফুটে ওঠে। সে দিকে তাকিয়েই কাজ চলছে।”
স্কুল শিক্ষকদের একাংশ অবশ্য জানান, কোনও ভাবেই স্কুলের বাইরে থাকা পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে স্কুলছুট কোনও পড়ুয়াকে স্কুলে টেনে আনার কিছু দিন পরে সে আবার স্কুল ছেড়ে দেয়। নতুন পড়ুয়াদেরও অনেকে নানা কারণে স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এক সময় তাদেরও কেউ কেউ স্কুল ছেড়ে দেয়। সর্বশিক্ষা অভিযানের সমীক্ষায় মাত্র সাড়ে ছ’শোর কাছাকাছি স্কুলছুটের কথা বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যাটি আরও বেশি বলেই মনে করছেন স্কুল শিক্ষকদের একাংশ। দীর্ঘ দিন ধরে দুর্গাপুরে শিশুশিক্ষা নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি। জড়তা বা ভীতি কাটানো একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের স্কুলে যেমন স্কুলছুটেরা থাকে, তেমনই একেবারে নতুন, এমন পড়ুয়ারাও রয়েছে। তাই আমাদের ধারণা, অনেকেই এখনও সরকারি সমীক্ষার বাইরে রয়েছে।”
জেলা সর্বশিক্ষা দফতরের আধিকারিক ভাস্করবাবু অবশ্য বলেন, “স্কুলছুটদের ফেরানোর প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ভাবে চলবে। প্রতি বছর সমীক্ষা হবে। তাই স্কুলছুটদের শনাক্ত করতে কোনও অসুবিধা থাকবে না।”