কমিশন নয়, ভোটারদের উপরেই ভরসা সিপিএমের

নির্বাচন কমিশন নয়, মানুষের উপরেই ভরসা করছে সিপিএম। ৭ মে, খণ্ডঘোষ বিধানসভা নির্বাচনের দিনে প্রত্যেকে যেন নিজের ভোটটা নিজেই দিতে আসেন সেই প্রচার চালাচ্ছেন দলের নেতারা। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত ঘণ্ডঘোষ ১৯৭৭ সাল থেকেই বামেদের শক্ত ঘাঁটি। কোনও নির্বাচনে না হারার রেকর্ডও রয়েছে তাঁদের। সে কথা মাথায় রেখেই প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের সমর্থনে ইতিমধ্যেই তারকাদের প্রচারে নামিয়েছে তৃণমূল। একাধিকবার সভা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়।

Advertisement

রানা সেনগুপ্ত

খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০০:৫৮
Share:

নির্বাচন কমিশন নয়, মানুষের উপরেই ভরসা করছে সিপিএম।

Advertisement

৭ মে, খণ্ডঘোষ বিধানসভা নির্বাচনের দিনে প্রত্যেকে যেন নিজের ভোটটা নিজেই দিতে আসেন সেই প্রচার চালাচ্ছেন দলের নেতারা। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত ঘণ্ডঘোষ ১৯৭৭ সাল থেকেই বামেদের শক্ত ঘাঁটি। কোনও নির্বাচনে না হারার রেকর্ডও রয়েছে তাঁদের। সে কথা মাথায় রেখেই প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের সমর্থনে ইতিমধ্যেই তারকাদের প্রচারে নামিয়েছে তৃণমূল। একাধিকবার সভা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়।

গত ৩০ মে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের লোকসভা নির্বাচনের দিনে খণ্ডঘোষ লাগোয়া রায়না, জামালপুরের প্রায় ৫৬টি বুথ দখল করে ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ৭ মে-র ভোটেও খণ্ডঘোষে সেই ছবিই দেখা যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা খণ্ডঘোষ জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক মহফুজ রহমান বলেন, “ভোটের দিন খণ্ডঘোষ বিধানসভা এলাকায় বুথ দখলের জন্য ওরা রায়না থেকে দলের আশ্রিত সমাজবিরোধীদের নিয়ে আসবে, এমন খবর পাচ্ছি। পলেমপুর-উচালন ও উচালন-একলখি রায়না ও খণ্ডঘোষের সীমান্ত এলাকা তাই সিল করে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন আমাদের প্রার্থী সুস্মিতা বাউড়ি। তবে দাবি মানা হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।”

Advertisement

মহফুজ সাহেবের আরও অভিযোগ, “খণ্ডঘোষের কয়েকটি এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হলেও, তাদের বসিয়েই রাখা হয়েছে। স্পর্শকারত বা অতি স্পর্শকাতর বুথ এলাকাগুলিতে ভোটের আগে তাদের রুট মার্চ করারও ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকী যে সব জায়গা বা সেক্টর অফিসে এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছে, সেখানে প্রতিদিনই তৃণমূলের নেতারা তাঁদের ভোজ খাওয়াচ্ছেন।” ফলে প্রয়োজনে জওয়ানেরা কতটা সক্রিয় হবেন তা নিয়েও সংশয় রয়েই যাচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের চেয়েও এলাকার ভোটারদের উপরে বেশি ভরসা করছে সিপিএম। মহফুজ রহমান বলেন, “মানুষ সকাল সকাল বুথে গিয়ে নিজের হাতে নিজের ভোট দিতে চাইছেন। প্রচারে গিয়েও আমরা তা দেখছি। আমাদের কর্মীরাও এ বার ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত সারাদিন বুথে থাকতে বদ্ধপরিকর। সহজে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না।”

তবে সিপিএমের জয়ের রেকর্ড ভাঙতে তাদের বুথ দখল করতে হবে এ কথা মানতে চাননি বিষ্ণুপর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র খা।ঁ তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। রায়না, জামালপুরে ঠিক কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে আমাদের লোকসভা কেন্দ্রে কোনও বুথই দখল করার দরকার নেই। এমনিতেই মানুষ খণ্ডঘোষে সিপিএমের অত্যাচারে বিরক্ত। তাই আমাদের দিকেই অধিকাংশ বুথে ভোট পড়বে। এছাড়া আমরা প্রচারে অনেক তারকাকে এনেছি। সর্বভারতীয় থেকে রাজ্য ও জেলার নেতারাও এসেছেন। ভিড় উপচে পড়েছে সভাগুলোয়। এই উপস্থিতি যদি ভোটে প্রভাব ফেলে তাহলে তো আমি জিতেই গিয়েছি।”

৩০ এপ্রিলের ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায়না-জামালপুরে বেশ কিছু বুথ দখল করে ছাপ্পার অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি। প্রচুর বুথে পুননির্বাচনও দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজি হয়নি নির্বাচন কমিশন। সোমবার বর্ধমানের জেলাশাসক তথা নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন বলেন, “৩০ এপ্রিলের নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে সামান্য কিছু অভিযোগ মিলেছিল।”

কিন্তু এত অভিযোগ যেহেতু হয়েছিল, তা মাথায় রেখে রায়না, জামালপুরে বুধবার বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কী প্রশাসন? জেলাশাসক বলেন, “৩০ এপ্রিলের ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলিকে ডেকে বৈঠক করা হয়েছিল। তাঁরা যে এলাকা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন, সেই প্রতিটি জায়গায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ৭ মে ভোটের আগে রবিবারও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা যে সব এলাকা সম্পর্কে নিজেদের দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন, সেগুলি সম্পর্কে বিশেষ ব্যবস্থা আগের মতোই নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement