পদাধিকারী মনোনয়ন নিয়ে ভোটাভুটিতে নানা প্রশ্ন ওঠায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গড়ার কাজ। নিয়ম খুঁজতে গিয়ে জানা গিয়েছিল, এত দিন রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই কাজ করছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার কালনার মহকুমাশাসক সভাপতি হিসেবে ওই সংস্থার নথিতে তাঁর নাম না লেখার নির্দেশ দিলেন সম্পাদককে। তবে নিয়মের গেরো কাটিয়ে নতুন কমিটি কবে গড়া হবে, কীভাবে গড়া হবে তার উত্তর মেলেনি।
১৯৫০ সালে তৈরি কালনা মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা মহকুমা পর্যায়ে নানা লিগ পরিচালনা-সহ সারাবছর খেলাধূলার মান উন্নয়নে কাজ করে। পদাধিকার বলে এত দিন সংস্থার সভাপতি ছিলেন মহকুমাশাসক। কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নানা কারণে নতুন কমিটি গড়া হয়নি। সম্প্রতি ক্লাব প্রতিনিধি নির্বাচন শুরু হয়। সংস্থার অনুমোদিত ২৫টি ক্লাব থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে ৯টি ক্লাব নির্বাচিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত ক্লাবগুলির প্রতিনিধিরা কার্যকরী সমিতির সদস্য হিসাবে বিবেচিত হন, যাঁদের কমিটির পদাধিকার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। রবিবার সম্পাদক, সহ-সম্পাদক সহ কয়েকটি পদের জন্য কমিটি তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী এর মধ্যে ঢুকে পড়ায় বিষয়টি অন্য মাত্রা নেয়। সভায় কালনার বিধায়ক এবং জেলার এক মন্ত্রীর অনুগামীরা আলাদা ভাবে ক্রীড়াপ্রেমীদের নামের প্যানেল জমা দেন। মন্ত্রীর অনুগামীরা সংস্থার ভোটদানের নিয়ম-কানুন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। জানা যায়, এত বছরের পুরনো সংস্থার রেজিস্ট্রেশনই নেই। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ সরকার জানান, ২০০৫ সাল থেকে নানা ভাবে রেজিস্ট্রেশন করানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে প্রতিবারই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কোন সরকারি নির্দেশিকার বলে সংস্থার চেয়ারম্যান মহকুমাশাসক, এ ব্যাপারে তথ্য দেওয়া যায়নি বলে আটকে রয়েছে রেজিস্ট্রেশন। প্রশ্ন ওঠে, যে সংস্থার কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই তার মাথায় কি করে থাকেন মহকুমাশাসকের মতো পদাধিকারী? এছাড়া সংস্থার অডিট-সহ নানা নথিতে মহকুমাশাসকের স্বাক্ষর নিয়েও বিতর্ক দেখা যায়।
সোমবার কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জেলা সদরে জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন অমরেন্দ্রবাবু। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, বৈঠকে অমরেন্দ্রবাবু সভাপতি হিসেবে মহকুমাশাসকের কাছে তাঁর পদত্যাগ জমা দিতে যান। মহকুমাশাসক জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা যে আমায় সংস্থার সভাপতি বলছেন সে ব্যাপারে কোনও সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে?’ অমরেন্দ্রনাথবাবু জানান, বহু বছর ধরে পদাধিকার বলে মহকুমাশাসকেরাই সংস্থার সভাপতির দায়িত্বে কাজ করে আসছেন। এটাই রেওয়াজ। মহকুমাশাসক অবশ্য এই উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। পদত্যাগপত্র জমাও নেননি। পরে নতুন কমিটি গড়ার ব্যাপারে মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি। ওই আবেদন পত্রেও মহকুমাশাসককে সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে তা বদলও করা হয়। দুপরে মহকুমাশাসক বলেন, “আপাতত মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার প্যাডে সভাপতি হিসাবে আমার নাম লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” অমরেন্দ্রনাথবাবু জানান, মহকুমাশাসককে আগের মহকুমাশাসকদের কথা জানিয়ে সভাপতির পদে থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে উনি রাজি না হলে জেনারেল বৈঠক ডেকে সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না থাকা সত্ত্বেও কি ভাবে সংস্থা বিভিন্ন খাতে বরাত পেত? মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার বক্তব্য, সরকারি অনুদানের অর্থ সরাসরি সংস্থার অ্যাকাউন্টে আসে না। সরকারি তহবিলের টাকা পুরসভা এবং মহকুমাশাসকের দফতরের মাধ্যমে খরচ হয়।