সময়ে খরচ না করায় বরাদ্দ ফেরত চাইল সর্বশিক্ষা অভিযান। লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েও উন্নয়নের কাজ শুরুই না করায় বর্ধমান জেলার বেশ কিছু স্কুলকে টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে স্কুলগুলি। কিন্তু এখন আর কোনও উপায় নেই। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে টাকা ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে সর্বশিক্ষা দফতর।
বর্ধমান জেলা সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকের ঘর, শৌচাগার ইত্যাদি তৈরির জন্য জেলার ৩০৫টি স্কুলকে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে কয়েক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল। এখন ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষ শেষের পথে। কিন্তু বহু স্কুল কাজ শুরুই করেনি। নিয়মানুযায়ী সেই সব স্কুল থেকে টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে বলে জানান ওই দফতরের প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর পাল।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্র সংখ্যার নিরিখে বরাদ্দ নির্ধারিত হয়েছিল। ২০১২ সালের জুলাইয়ের শুরুতে টাকা পাঠানো হয় স্কুলগুলিকে। দুর্গাপুরের নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুল ছ’মাসের মধ্যে কাজ শেষ করেছে। নতুন শ্রেণিকক্ষে পুরোদমে ক্লাস চালু হয়ে গিয়েছে। কাঁকসার সিলামপুর হাইস্কুল, কাঁকসা গার্লস স্কুল, পানাগড় হিন্দি হাইস্কুল, বুদবুদের ভরতপুর জুনিয়র হাইস্কুল-সহ জেলার বহু স্কুলই বরাদ্দ টাকা খরচ করে ফেলেছে। নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কলিমুল হকের কথায়, “এক সঙ্গে এত টাকা পাওয়ার কথা ভাবাই যায় না। এমন সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া করার প্রশ্নই নেই।” সিলামপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পাল বলেন, “বরাদ্দ কাজে না লাগালে ক্ষতি পড়ুয়াদের।”
কিন্তু জেলার প্রায় ৬৫টি স্কুল সময়ে কাজ শুরুই করেনি বলে সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। তাদের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কেন এই পরিস্থিতি? নানা কারণ দেখাচ্ছে টাকা খরচ করতে না পারা স্কুলগুলি। বরাদ্দ হিসেবে পাওয়া ৪৪ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরকে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা বক্সী বলেন, “পরিচালন সমিতির নির্বাচন হয় দেরিতে। সমিতি গঠনের পরপর স্কুল হয়ে যায় সরকার পোষিত। সে জন্য নতুন পরিচালন সমিতি গড়তে হবে। সেই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা এখনও আসেনি। তাই সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি।” স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়া সংখ্যা বাড়ায় নতুন শ্রেণিকক্ষ গড়া এবং শৌচাগার গড়ার কাজে এই টাকা কাজে লাগানো যেত। কিন্তু তা হল না। ওই স্কুল ভবনেই সকালে একটি প্রাথমিক স্কুল চলে। সেই স্কুল পৃথক ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল। শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই। তবু কাজ হয়নি। সেই টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে সর্বশিক্ষা দফতরকে। কাঁকসা হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জয়ন্ত ঘোষ জানান, তিনি নভেম্বরে কাজে যোগ দেন। দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কিন্তু প্রক্রিয়া সময়ে শেষ করা যায়নি।
এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের উন্নয়নে আর্থিক সমস্যার কথা প্রায়শয়ই শোনানো হয়। কিন্তু এ ভাবে টাকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও কাজ না করা মেনে নেওয়া যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “কত স্কুল বরাদ্দের জন্য হাপিত্যেস করছে। এ দিকে বরাদ্দ পেয়েও কাজে লাগাতে পারছে না কেউ কেউ।” সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত কাজ করতে না পারা স্কুলগুলি টাকা ফেরত দিক। পরে আবার তাদের জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ করা যায় কি না, দেখা হবে।