দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট। ফাইল চিত্র।
কারখানার উত্পাদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে আর একটি ‘ল্যাডল ফার্নেস’ চালু হল দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে। কারখানায় এই ফার্নেস এটি নিয়ে তৃতীয়। শুক্রবার ফার্নেসটির উদ্বোধন করে ডিএসপি-তে আসেন স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেল) চেয়ারম্যান সি এস ভার্মা। তিনি বলেন, “নতুন এই ল্যাডল ফার্নেসটি চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে উন্নতমানের ইস্পাত উত্পাদনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ডিএসপি।”
সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচের দশকে যখন ডিএসপি গড়ে ওঠে, তখন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ লক্ষ টন ক্রুড ইস্পাত উত্পাদন। সাতের দশকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ লক্ষ টনে। কিন্তু ইস্পাতের বাজার পড়ে যাওয়া ও পুরনো প্রযুক্তির কারণে আটের দশকের মাঝামাঝি মন্দা দেখা দেয় কারখানায়। তার প্রভাব পড়ে ডিএসপি টাউনশিপে। তখন মূলত ডিএসপি নির্ভর দুর্গাপুর শিল্পনগরী মৃতপ্রায় হয়ে ওঠে। শেষে নয়ের দশকের শুরুতে ডিএসপি-র আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নেয় কেন্দ্র। ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত করছে সেল। বর্তমানে কারখানায় বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টন হট মেটাল, ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টন ক্রুড ইস্পাত এবং ১০ লক্ষ ৬০ হাজার টন বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত উত্পাদন হয়। সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়ে গেলে ডিএসপি-র বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত উত্পাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ লক্ষ ১২ হাজার টনে। উন্নতি ঘটবে ইস্পাতের গুণমানেও।
সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিএসপি-র উত্পাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি আধুনিক টেকনোলজির ‘কন্টিনিউয়াস কাস্টিং রুট’ নির্ভর করে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে। স্টিল মেল্টিং শপে এর আগে দু’টি ল্যাডল ফার্নেস ছিল। কিন্তু সে দু’টি দিয়ে তিনটি কন্টিনিউয়াস কাস্টারে তরল ইস্পাতের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার কাজ যথাযথ হচ্ছিল না। ফলে এই তৃতীয় ফার্নেসটি গড়া জরুরি হয়ে উঠেছিল। তাই প্রায় ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ল্যাডল ফার্নেসটি গড়া হয়েছে। শুক্রবার সেটির উদ্বোধনে সেলের চেয়ারম্যান সি এস ভার্মা ছাড়াও ছিলেন সেলের ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) এস এস মহান্তি, ডিরেক্টর (প্রজেক্টস ও বিজনেস প্ল্যানিং) টি এস সুরেশ, ডিএসপি-র সিইও তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি কে সিংহ প্রমুখ।
ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো জানান, সেল কর্তৃপক্ষ ডিএসপি-র আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন ল্যাডল নির্মাণ তারই অংশ। কী ভাবে কাজে আসবে নতুন এই ফানের্সটি? ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে কন্টিনিউয়াস কাস্টারে তরল ইস্পাতের প্রবাহমাত্রা আগের থেকে বাড়বে। ফলে, বাড়বে সংস্থার সার্বিক উত্পাদন ক্ষমতাও। সেলের চেয়ারম্যান সিএস ভার্মা বলেন, “আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়ে গেলে কন্টিনিউয়াস কাস্টিং রুটের মাধ্যমে প্রায় একশো শতাংশ উত্পাদনক্ষম হয়ে উঠবে ডিএসপি।” পরিকল্পনা রূপায়িত করতে প্রায় ২ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে বলে সেল সূত্রে জানা গিয়েছে।