পাড় ভাঙছে কলডাঙা ও নতুনচরের। —নিজস্ব চিত্র।
ভোরের আলো ভাল করে ফুটতে না ফুটতেই ঘাটে এসে উপস্থিত হয় ইঞ্জিন লাগানো নৌকা। কোদাল, বেলচা-সহ মাটি কাটার বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে নেমে আসেন লোকজন। একের পর এক কোপে উঠে আসে তাল তাল মাটি। আবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ঘাট ছেড়ে চলে যায় নৌকা। এ ভাবেই দিনের পর দিন মাটি কাটা চলছে কালনা-১ ব্লকের কলডাঙা ও নতুনচর গ্রামের ভাগীরথী নদী সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, লাগাতার মাটি চুরি যাওয়ায় ভাগীরথী নদী ক্রমশ এগিয়ে আসছে ওই দু’টি গ্রামের দিকে। আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে পাড়ের মাটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাগীরথীর দুই পাড়ের দুই গ্রাম কলডাঙা ও নতুনচরের বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য একমাত্র ভরসা হল জলপথ। দু’টি গ্রামেই রয়েছে বিশাল চাষের জমি। সেই জমির ফসলেই অনেক গ্রামবাসীর সংসার চলে। কিন্তু, মাটি চোরেদের কোপে বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি ইতিমধ্যেই ভাগীরথীর গর্ভে চলে গিয়েছে। ধারাবাহিকভাবে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে ভাগীরথীর পাড় বরাবর জমি কোথাও উঁচু হয়ে রয়েছে আবার কোথাও নিচু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মাটি কাটার নৌকাগুলি মূলত মালতিপুর, কালনা, গুপ্তিপাড়া-সহ কয়েকটি এলাকা থেকে আসে। গ্রামবাসীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই মাটি চুরি চললেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাটি কাটায় বাধা পেয়ে অনেক সময়ে বোমাবাজিও করেছে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সালাম শেখ বলেন, “গ্রামের মানুষ পাহারা দেওয়া সত্ত্বেও মাটি কাটা আটকানো যাচ্ছে না। ভাগীরথীর দু’পাড়ের দুটি গ্রামকে বাঁচানোর জন্য পুলিশকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত কিছু নৌকাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও মাটি কাটা আটকানো যায়নি।
সম্প্রতি, লোকসভা ভোটের প্রচারে কলডাঙা ও নতুনচর গ্রামে এসেছিলেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল কুমার মণ্ডল। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। তৃণমূল প্রার্থী গ্রামবাসীদের কাছে ভোট চাওয়ার পর তাঁরা পাল্টা তৃণমূল প্রার্থীর কাছে মাটি চুরি বন্ধ করার দাবি জানান। একই সঙ্গে গ্রামবাসীরা জানান, শুধু চাষের জমিই নয়, চলার রাস্তা থেকেও অবাধে মাটি চুরি যাচ্ছে। প্রার্থী গ্রামবাসীদের বিষয়টি মহাকুমাশাসক ও জেলাশাসককে জানাতে বলেন।
মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মাটি চুরি রুখতে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। মাঝে মধ্যে মাটি চুরির নৌকা আটক করা হয়। কিন্তু সেগুলি রাখার জায়গা না থাকার কারণে সেগুলি ছেড়ে দেওয়া হয়।