রাজ্যে করেমসংস্থান কম তাই ভিন রাজ্যে যান কর্মীরা। — ফাইল চিত্র।
বিপদ যেন পিছু ছাড়ে না পরিযায়ী শ্রমিকদের।
অতিমারির সময়ে দল বেঁধে বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁদের। রাজ্য সরকারের আশ্বাস ছিল, ওই শ্রমিকদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু অতিমারির প্রভাব কমতেই শ্রমিকদের অনেকে ফের ভিন্ রাজ্যে কাজে ফিরে যান। এ বার কেউ ইদের ছুটি কাটিয়ে, কেউ পরিজনের বিয়ে সেরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। কেউ নির্মাণ শ্রমিকের কাজে, কেউ আবার কৃষি শ্রমিক হিসেবে যাচ্ছিলেন ভিন্ রাজ্যে। ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে জেলার ১৩ জনের, যাঁদের মধ্যে ১২ জনই পরিযায়ী শ্রমিক। আহতের তালিকায় থাকা কয়েক জনকে বাদ দিলে বাকিরাও পরিযায়ী শ্রমিক বলে জানা গিয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশের দাবি, বড় কোনও দুর্ঘটনা বা বিপর্যয়ের পরে তাঁদের সমস্যার কথা জানা যায়। কিন্তু কর্মস্থলে গিয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবেও প্রতিনিয়ত নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। কিছু দিন আগে জামালপুরের এক নির্মাণ শ্রমিক বহুতলে কাজ করতে গিয়ে পড়ে মারা যান। আবার, ভাতারের এক মহিলা কেরলে কাজ করতে গেলে সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়। তাঁদের দেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনতে পরিজনের অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়। জামালপুরের এটি পরিবার পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। সেখানে শিশু-সহ দম্পতিকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে জেলে বন্দি করা হয়। ১০ মাস পরে জামিন পেয়েছেন তাঁরা। তার মধ্যে ছেলে, বৌমা ও নাতির চিন্তায় বেঙ্গালুরুতেই প্রাণ হারান বৃদ্ধ পঙ্কজ অধিকারী।
জামিন পাওয়ার পরে জামালপুরের ওই বাসিন্দা পলাশ বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্ রাজ্যে থাকার যন্ত্রণা অনেক। জামালপুরের বাসিন্দা হিসেবে যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও ১০ মাস ছেলে-বউকে নিয়ে জেলে থাকতে হল। বাবাকে হারালাম।’’ তাঁর পরিজনের দাবি, এই বিপর্যয়ের পরেও হয়তো কাজের খোঁজে পলাশদের ফের ভিন্ রাজ্যে পা বাড়াতে হবে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় পড়া আহত যাত্রীদের দাবি, চেন্নাই বা কেরলে কাজের অভাব নেই। এ রাজ্যে তো সে তুলনায় কাজ নেই। তাই বিপদ আসতে পারে ধরে নিয়েও বাড়তি রোজগারের আশায় ভিন্ রাজ্যে যেতে হয়।
ভাতারের বাসিন্দা শেখ সেলিম বলেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির কাজ করি। কেরলে মাসে সব খরচ বাদ দিয়েও ১৫-১৬ হাজার টাকা হাতে থাকে। সেই টাকা জমিয়ে বোনের বিয়ে দিয়েছি। এখানে কাজ কোথায়? সে জন্য আমাদের ভিন্ রাজ্যে যেতেই হবে।’’ একই সুর শোনা যায় মেমারির শেখ হাবিব থেকে পূর্বস্থলীর আবু বক্কর শেখদের গলায়। তাঁরা বলেন, ‘‘পরিজন ছেড়ে কে আর বাইরে গিয়ে কাজ করতে চায়? উপায় নেই বলেই তো যেতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’’
জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলামের দাবি, ‘‘গ্রামে একশো দিনের কাজ একটা বিকল্প আয় ছিল। বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, শ্রমিকদের বকেয়া টাকাও দিচ্ছে না। সে কারণেই কাজের খোঁজে অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।’’ যদিও তা নারাজ বর্ধমান জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে কাজ নেই বলেই পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। ওঁরা তো একশো দিনের কাজ করেন না।’’