Workers of Raniganj

প্রকল্পের কথা জানেন না, দাবি শ্রমিকের

সমস্যার কথা জানাচ্ছেন শ্রমিকেরাও। গ্যারাজ মিস্ত্রি দীনেশ সাউ, নির্মাণকর্মী ভোলা কোড়া-সহ কয়েক জন শ্রমিক জানান, তাঁরা সরকারের খাতায় নাম নথিভু্ক্ত করাননি।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

জেলায় অন্তত সাড়ে চার লক্ষ শ্রমিক অংসগঠিত শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত বলে বাম প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন সিটুর দাবি। কিন্তু সরকারি হিসাবে পশ্চিম বর্ধমানে তিন লক্ষ শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত রয়েছে ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে’। জেলার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁরা এই সরকারি প্রকল্প যে আছে, সেটাই জানেন না। ফলে, সেই সংক্রান্ত সুযোগসুবিধাও পান না।

Advertisement

শ্রম দফতর সূত্রের খবর, গ্যারাজ মিস্ত্রি, নির্মাণকর্মী, কাঠমিস্ত্রি, পরিচারিকা-সহ মোট ৮০টি পেশা অসংগঠিত শ্রমক্ষেত্র হিসাবে স্বীকৃত। এ বারের দুয়ারে সরকার শিবিরে ওই প্রকল্পের প্রভিডেন্ট ফান্ডের পাসবুক আপডেট করা হয়েছে। প্রশাসনের হিসাবে সেই আপডেট করিয়েছেন নথিভুক্ত তিন লক্ষ শ্রমিকের মধ্যে ১৬ হাজার জন। এ দিকে, এই তিন লক্ষের বাইরে প্রচুর শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা এই প্রকল্পের বিষয়ে জানেন না বলে দাবি সিটুর। অথচ, এই প্রকল্পে অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে দু’লক্ষ টাকা এবং কাজ করার মতো সক্ষম না থাকলে ৫০ হাজার থেকে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, “উপযুক্ত প্রচার না হওয়ায় অন্তত দেড় লক্ষ শ্রমিক সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত।”

সমস্যার কথা জানাচ্ছেন শ্রমিকেরাও। গ্যারাজ মিস্ত্রি দীনেশ সাউ, নির্মাণকর্মী ভোলা কোড়া-সহ কয়েক জন শ্রমিক জানান, তাঁরা সরকারের খাতায় নাম নথিভু্ক্ত করাননি। কেন? তাঁদের বক্তব্য, “কাজ করার পরে সময় হয় না।” আবার কাঠমিস্ত্রি অনিল গুপ্ত বলছেন, “এমন কোনও প্রকল্প আছে না কি? জানি না তো! আমাদের কেউ কিছু বলেননি। কোথায় কী ভাবে প্রকল্পের জন্য নাম লেখাতে হয়, জানি না।”

Advertisement

সমস্যার কথা মানতে চাননি আসানসোল মহকুমার উপ-শ্রম অধিকর্তা অমিয় দাস। তিনি জানান, জেলায় এ পর্যন্ত ৬০ হাজার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু আরও বহু সংখ্যক শ্রমিকের প্রকল্পের বাইরে থাকা ও প্রচার কম হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শিল্পমেলা-সহ নানা সরকারি অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্টল দেওয়া হয়। যথাযথ ভাবে প্রচার চালানো হয়।” শ্রম দফতর জানাচ্ছে, সরকারি নানা প্রকল্পের বিষয়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জানানোর জন্য পঞ্চায়েত ও পুরসভা স্তরে প্রতিটি এলাকায় প্রতিনিধিরা (‘কালেক্টর’) কাজ করেন। সেই কাজ তদারক করতে প্রতিটি ব্লকে এক জন করে ইনস্পেক্টর আছেন। এ ছাড়া, প্রতিটি মহকুমায় শ্রম দফতরে সারা বছর নাম নথিভুক্ত করানো যায়।

যদিও, অনিল-সহ কয়েক জন অসংগঠিত শ্রমিক জানাচ্ছেন, শিল্পমেলা বা সরকারি কোনও অনুষ্ঠানে তাঁদের সে ভাবে যাওয়ার সুযোগ ঘটে না। অনুষ্ঠান চলছে, তা-ও জানাটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না বেশির ভাগ সময়েই।

পাশাপাশি, সিটু অনুমোদিত নির্মাণকর্মী ইউনিয়নের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি সুপ্রিয় রায়ের অভিযোগ, “দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিনিধিরা যে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সঙ্গে বিন্দুমাত্রও যোগাযোগ রাখেন না, সেটা বেঝা যাচ্ছে। সরকারি স্তরে উপযুক্ত প্রচার এবং নিবিড় যোগাযোগের অভাবে প্রকল্পটি ব্যর্থ হচ্ছে।” পাশাপাশি, ভারতীয় জনতা মজদুর মঞ্চের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ পাঠকের তোপ, “রাজ্যের গালভরা নানা প্রকল্প আছে। কিন্তু তার সুফল সাধারণ মানুষ পান না। অসংগঠিত শ্রমিকদের প্রধান সমস্যা ন্যূনতম মজুরি না পাওয়া। সে বিষয়েও রাজ্য নীরব।” যদিও, আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের প্রতিক্রিয়া, “রাজ্য সরকার অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সর্বদা সচেতন। তাঁদের জন্য থাকা প্রকল্পগুলির বিষয়ে আমরা সাংগঠনিক
ভাবেও প্রচার চালাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement