তালা ঝুলবে! ওয়াগন নির্মাণ সংস্থা বার্ন স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে রেল মন্ত্রকের সিদ্ধান্তের পরে আশঙ্কা নিয়ে চলেছেন ওই সংস্থার কর্মীরা। কারখানা বন্ধ হচ্ছে রবিবার, এমন খবর সামনে এসে পড়ায় এই অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে। এমন অবস্থায় এলাকার সাংসদ তথা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় কোথায়, সোমবার সেই প্রশ্ন তুলেছেন কর্মীরা।
রেল মন্ত্রকের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে রবিবারও কারখানা চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন কর্মীরা। এই বিষয় নিয়ে কারখানা চত্বর, কর্মী-আবাসন, সবখানেই যখন আলোচনা চলছে, সেই সময় বাবুল জেলা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজবাঁধের একটি বেসরকারি হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। সভার পরে সমাবেশও করেন। এই আশঙ্কার মধ্যে কর্মীরা ভেবেছিলেন বাবুল তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু তিনি জেলায় থেকেও এলাকায় না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
কর্মীদের প্রশ্ন, বাবুল জেলায় এসেও নিজের এলাকাতে এলেন না কেন? কারখানার এতগুলি শ্রমিকের ভবিষ্যত যখন সঙ্কটে, তখন তিনি পাশে দাঁড়াতে এলেন না। কর্মী সন্তোষ সিংহ, উমাপদ বাউরি বলেন, ‘‘এলাকার মন্ত্রী তিনি। অথচ কারখানার এই খবর পেয়েও কর্মীদের কাছে এলেন না। তাঁর সম্মতি রয়েছে বলেই হয়তো তিনি এলাকাটিকে এড়িয়ে গেলেন!’’
মন্ত্রী কারখানায় না আসায় বিড়ম্বনা বেড়েছে খোদ বিজেপি’র শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় হিন্দ মজদুর সঙ্ঘের নেতাদের মধ্যেও। দলের নেতা তথা কারখানা বাঁচাতে গঠিত জয়েন্ট কমিটির নেতা দিলবাগ সিংহ বলেন, ‘‘অনেকেই এই প্রশ্ন তুলছেন। উনি না এলে আমরা কী করব! তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারেন না। আমরা কারখানার বিষয়ে বিস্তারিত তাঁকে একাধিক বার জানিয়েছি।’’
কারখানা সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে ২৫০জন কর্মী, ১৫০জন চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কাজ করেন এখানে। তাঁদের সকলেরই ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। সংস্থার পাঁচটি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন যৌথভাবে ‘সেভ কমিটি’ তৈরি হয়েছিল। ওই কমিটির আহ্বায়ক বিএমএস নেতা অনিল সিংহ বলেন, ‘‘এর প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।’’ তবে ভারতীয় হিন্দ মজদুর সভার নেতা দিলবাগ সিংহ, সিটু নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার এখনই কারখানা বন্ধ হচ্ছে বলে বিশ্বাস করি না। ‘ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল’-এ আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বার্ন স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি রয়েছে। ওই দিনের রায় দেখে সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের ভূমিকায় শিল্পাঞ্চলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিটুর জেলা সভাপতি বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘জেলায় এসেও কারখানায় না আসা অন্যায়। তিনি চিরকালই সমস্যা থেকে এড়িয়ে গিয়েছেন। শ্রমিকদের পাশে কোনও দিনই দাঁড়াননি। কারখানা বন্ধ করাই বাবুলের লক্ষ্য।’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে ফের কারখানা বন্ধ হচ্ছে। যদিও রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারখানা খোলা রাখতে একাধিক চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু দিল্লি এই রাজ্যে কিছু চলতে দেবে না।’’ তাঁর দাবি, বাবুল এখনই পদত্যাগ করুক। কারণ, কারখানা বন্ধ করতে তাঁরও সম্মতি রয়েছে।
তৃণমূলের এই দাবি নিয়ে রবিবার বাবুলকে বহুবার ফোন করা হয়। তাঁর সচিব জানান, উনি ব্যস্ত আছেন। হোয়াটস্ অ্যাপে মেসেজও করা হয়। তিনি তারও উত্তর দেননি।