ডাঁই: পড়ে রয়েছে জলের পাইপ। বর্ধমানের তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। ছবি: উদিত সিংহ
উচ্চ জলাধার তৈরি হয়েছে। অলিগলিতে পাইপলাইন বসেছে। কিন্তু সেই পাইপে এখনও জল আসেনি। সব কিছু ঠিক থাকলে গত বছর যে প্রকল্প থেকে জল পাওয়ার কথা ছিল বাসিন্দাদের, তা কবে শেষ হবে সেটাই এখন প্রশ্ন বর্ধমান শহরে। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় কয়েকটি অনুমতি মেলেনি, দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। বিরোধীদের অভিযোগ, পুরসভার গাফিলতিতেই শেষ হয়নি কাজ। আসন্ন পুরভোটে শহরের নানা প্রান্তে জলের সমস্যা চর্চার বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে সব পক্ষই।
শহরে জল সরবরাহের জন্য প্রায় ১৩৫ বছর আগে লাকুর্ডিতে তৈরি হয়েছিল ‘জলকল’। সময়ের সঙ্গে জনসংখ্যা বেড়েছে। ৩৫টি ওয়ার্ডে এখন প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের বাস। পুরবোর্ড বামেদের হাতে থাকার সময় থেকেই ৫৯টি সাব-মার্সিবল পাম্পের সাহায্যে পানীয় জল দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটে না। জলের সঙ্কট মেটাতে ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ প্রকল্পে দামোদর থেকে জল তুলে সরবরাহের পরিকল্পনা হয়। পরে সেটি কেন্দ্রের ‘আমরুত’ (অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আর্বান ট্রান্সফরমেশন) প্রকল্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-এর মাঝামাঝি প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। এত দিনে দামোদরের জল শোধন করে বাড়ি-বাড়ি পৌঁছনোর কথা। কিন্তু বছর দেড়েক আগে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যে দ্রুততায় প্রকল্প এগনোর কথা ছিল, তা হয়নি বলে বিদায়ী কাউন্সিলরদের একাংশের দাবি।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, দামোদর থেকে জল তুলতে ডিভিসি ও সেচ দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। সে জন্য চিঠি পাঠালেও তার জবাব এখনও আসেনি। গোড়ায় ইদিলপুর থেকে জল পাইপের মাধ্যমে জলকল পর্যন্ত নিয়ে আসার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু পরে বিশেষজ্ঞেরা ইদিলপুরের বদলে জুজুটি থেকে জল নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সে জন্য পাইপ বসাতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অনুমতি এখনও মেলেনি।
পুরসভা সূত্রের দাবি, গলির রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানোর পরে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ক্ষোভের মুখে পড়েন কর্মী-আধিকারিকেরা। সেই সব রাস্তা পুরভোটের আগে সংস্কার হচ্ছে। এখন বড়-বড় পাইপ বসিয়ে জলের সংযোগ করতে হবে। পুরভোটের আগে রাস্তা খুঁড়ে সেই কাজ করা সম্ভব হবে না। ফলে, প্রকল্পের কাজ ফের পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা পুর কর্তৃপক্ষের।
শহরের সব ওয়ার্ডেই কম-বেশি জলের সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তবে ন’টি ওয়ার্ডে সেই সমস্যা বেশি তীব্র বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বাবুরবাগ, বাহির সর্বমঙ্গলাপাড়া থেকে লক্ষ্মীপুর মাঠ, বাজেপ্রতাপপুর—জলের অভাবে ভুগতে হয় বলে দাবি করেন অনেক এলাকার বাসিন্দারাই। সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পাশের পাম্প মাঝেমাঝেই খারাপ হয় বলে অভিযোগ।
ভোটের আগে জল নিয়ে সরব হচ্ছে বিরোধীরাও। বিজেপির বর্ধমান শহর সভাপতি দেবাশিস সরকারের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে পুরসভা। দামোদর থেকে পানীয় জল সরবরাহের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে আমরা প্রচার শুরু করেছি।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তাপস সরকারের আবার অভিযোগ, “কোটি-কোটি টাকা খরচ হয়ে গেল। অথচ, পানীয় জল পৌঁছল না!’’ কংগ্রেসের জেলার কার্যকরী সভাপতি কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দামোদরে জলই তো থাকে তিন-চার মাস। বাকি সময় শহরবাসী কী ভাবে জল পাবেন, কেউ জানে না।’’ প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনুল হকের মত, “জলের সঙ্কট তীব্র হতে চলেছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
শহরে পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বিদায়ী পুরপ্রধান তৃণমূলের স্বরূপ দত্ত । তিনি বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত ও দরপত্রের নানা সমস্যায় ঠিক সময়ে কাজ শুরুর অনুমোদন দেওয়া যায়নি। সে জন্য কয়েকমাস কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। তবে বিরোধীরা যে সব প্রশ্ন তুলছেন, তা অবান্তর।’’