চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে ওঁরাও স্বপ্ন দেখেন, সমাজের মূলস্রোতের সঙ্গে মিশে আর পাঁচ জনের মতো জীবনধারণ করতে। মহিলা আবাসিকদের সেই স্বপ্নকে সফল করতেই স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে নাবার্ডের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।
বর্ধমানের রসিকপুরের সংশোধনাগারটিকে মাস খানেক আগেই জেলা থেকে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে উন্নীত করা হয়েছে। কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সংশোধনাগারে বর্তমানে ৮২ জন মহিলা আবাসিক রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৫৪ জন সাজাপ্রাপ্ত। তাঁদের মধ্যে ২৩ জন যাবজ্জীবনে দণ্ডিত। সাজাপ্রাপ্ত আবাসিকদের নিয়েই ‘নবজীবন’ ও ‘মুক্তি’ নামে দু’টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কারা দফতরের ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) বিপ্লব দাসের কথায়, “সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে ওই মহিলারা যাতে স্বনির্ভর হতে পারেন, তাই এই উদ্যোগ।’’
সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথা তৈরি, সেলাই, সয়াবিনের বড়ি, ধূপকাঠি, মোমবাতি, চানাচুর তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ওই আবাসিকদের। সেলিমা বিবি, নমিতা দাসদের (নাম পরিবর্তিত) মতো কয়েক জন আবাসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে রীতিমতো উৎসাহী। তাঁদের কথায়, ‘‘এখান থেকে বাইরে গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য মন দিয়ে কাজ শিখছি। যাতে ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারি, তার জন্য আমাদের সাহায্য করা হবে বলে জানানো হয়েছে।”
কর্তৃপক্ষ জানান, প্রাথমিক ভাবে আবাসিকদের তৈরি জিনিস সংশোধনাগার থেকেই বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। কারণ, তাঁদের জিনিস বিক্রি হলে, অন্য আবাসিকেরাও স্বনির্ভর হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের বিষয়ে উৎসাহী হবেন। সংশোধনাগারের সুপার শুভেন্দুকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, “আবাসিকদের জিনিস ‘নাবার্ডে’র মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়াও সয়াবিন বড়ি যাতে জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে বিক্রি করা যায়, সে বিষয়েও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি।” এর পাশাপাশি কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে বর্ধমান শহরে আবাসিকদের তৈরি কাঁথা, মোমবাতি, ধূপ বিক্রি করা যায় কি না, সে বিষয়েও কথা চলছে।
এমন প্রশিক্ষণ নিয়ে আশাবাদী কাশ্মীরা বেগম, জ্যোৎস্না মোহান্তদের (নাম পরিবর্তিত) মতো কয়েক জন আবাসিকও। তাঁদের কথায়, ‘‘আর কয়েক মাস পরেই সাজা শেষ হবে। নতুন জীবনে এখানের প্রশিক্ষণ ভীষণ কাজে আসবে।”