বটের বিয়ে নিয়ে ‘মা’ রেখা বলেন, ‘‘আমার ছেলে বড় হয়েছে। যৌবন থাকতে থাকতে তাই ওর বিয়ে দিয়ে দিলাম।’’ —নিজস্ব চিত্র।
তাঁদের বংশে দুই মেয়ে আছে। কোনও পুত্রসন্তান নেই। তাই বটবৃক্ষকে পুত্রস্নেহে বড় করছেন। ভেবেছিলেন ‘ছেলে’র বিয়েও দেবেন। কিন্তু পাত্রী খোঁজা আর হয়ে ওঠেনি। স্বামীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে সেই গাছেরই বিয়ে দিলেন স্ত্রী। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির পারিজাত নগরের ঘটনা। অভিনব এই বিয়ে দেখতে হাজির হলেন প্রতিবেশীরা।
বট গাছের বিয়ে। তবে বিয়ের আয়োজন থেকে সামজিক রীতিনীতি— সব পুঙ্খনাপুঙ্খ ভাবে পালন করেছেন ‘পাত্রের’ মা রেখা পাসোয়ান। তিনি জানান, তাঁদের দুই মেয়ে আছে। কোনও পুত্রসন্তান নেই। তাই তিনি এবং স্বামী বাড়ির সামনে একটি বট গাছকেই ছেলের মতো বড় করেছেন। একে একে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন রেখা। কিন্তু ছেলের আর বিয়ে দেওয়া হয়ে ওঠেনি। এ নিয়ে তার বড় আক্ষেপ ছিল স্বামীর। কিছু দিন আগে তিনি মারা যান। তাই ছেলের বিয়ের দায়িত্ব নেন রেখা। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স বেড়েছে বট গাছের। অনেক শাখা-প্রশাখা হয়েছে। আমার ছেলে বড় হয়েছে। যৌবন থাকতে থাকতে তাই ওর বিয়ে দিয়ে দিলাম।’’
রেখার এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে প্রতিবেশীরা উৎসাহ দেন। তাই আর দেরি না করে বটগাছের বিয়ের আয়োজন শুরু করেন। পুরোহিত এবং নাপিত ডেকে বিশাল ফর্দ লিখিয়েছেন। ফর্দ মিলিয়ে মিলিয়ে দশকর্ম ভান্ডার থেকে বিয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনেছেন। বিয়ের আয়োজন তো হল। কিন্তু পাত্রী? সেখানেও মুশকিল আসানে এগিয়ে আসে আর এক ‘প্রতিবেশী’। রেখা ও তাঁর স্বামীর যত্নে বেড়ে ওঠা বট গাছের পাশেই ছিল আরও একটি বট। প্রায় একই সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছে তারা। সেই বটের সঙ্গেই গত বুধবার ‘ছেলের’ বিয়ে দিলেন রেখা। নিয়ম মেনে কলাগাছ বসিয়ে, আল্পনা দিয়ে, শাড়ি-ধুতি, শাঁখা-সিঁদুর, টোপর পরিয়ে দুটি বট গাছকে সাজানো হয় বরের বেশে। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করেন বিয়ের আসরে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা সবাই হাজির ছিলেন এই বিয়ের অনুষ্ঠানে। রেখার প্রতিবেশী সোমা বাগ, মলিনা পাসোয়ানরা জানাচ্ছেন,শুধু বিয়ের আয়োজন নয়। সবার ভূরিভোজেরও আয়োজন করেছিলেন রেখা। সবাই নববিবাহিত বট জোড়াকে আশীর্বাদ করে বাড়ি ফিরেছেন।