ছবি: সংগৃহীত
বছর তিনেক আগে পরিবেশ আদালত দেশ জুড়ে চিনে মাঞ্জায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তার পরেও পূর্ব বর্ধমানের বহু আকাশেই ওই সুতোয় ঘুড়ি উড়ছে মকর সংক্রান্তিতে। দোকানেও সাধারণ মাঞ্জা সুতোর সঙ্গে রমরমিয়ে চলছে চিনে মাঞ্জার বিক্রি।
কলকাতার মা উড়ালপুল, দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে শুরু করে ভিন্ রাজ্যে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে এই সুতোয়। আঙুল, হাত কাটা তো আকছার, গলা কেটে যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। বিপদের মুখে পাখিরাও। তার পরেও নাইলনের সুতোয় কাচ, লোহাচুর মিশিয়ে দিব্যি চলছে চিনে মাঞ্জার ব্যবসা।
বর্ধমানে ‘ঘুড়ি-পরব’ হয় মকর সংক্রান্তিতে। রাজ পরিবারের ঐতিহ্য মেনে তিন দিন ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে চলে মেলা। তার আগে শহরের তেঁতুলতলা, বড়বাজার, বোরহাট, বড়নীলপুর সহ একাধিক বাজারে ভিড় উপচে পড়ে ঘুড়ির দোকানে। মঙ্গলবার এই সব বাজারের একাধিক দোকানে প্রকাশ্যে চিনে মাঞ্জার সুতো বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। ক্রেতারাও টেঁকসই বলে সাধারণ সুতোর চেয়ে ওই মাঞ্জা কিনছিলেন বেশি। দু’টোর দামেও তফাত বহু। সাধারণ মাঞ্জার সুতো ১০ রিলের দাম তিনশো-পাঁচশো টাকা। সেখানে চিনে মাঞ্জার ১০ রিলের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে দুশো টাকা পর্যন্ত হয়। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগই জানেন না এই মাঞ্জার ব্যবহার নিষিদ্ধ।
দীর্ঘদিন ধরে ঘুড়ি উৎসব পালন করেন বর্ধমানের খাজা আনোয়ার শহীদ বেড়ের বাসিন্দা সৌমেন লাহা। তিনি জানান, আগে মাঞ্জা তৈরি করা হত বাড়িতে। প্রায় এক মাস ধরে ঘুড়ি ওড়ানো চলত। কিন্তু এখন সময়ের অভাবে এক দিনই ঘুড়ি ওড়ানো হয়। ফলে, কেনা মাঞ্জাতেই ভরসা রাখেন লোকজন। তেঁতুলতলা বাজারে ঘুড়ি কিনতে এসেছিলেন সুব্রত সাহা, শ্যামসুন্দর ঘোষেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘তিন-চারটে দোকানে সাধারণ মাঞ্জা খুঁজেও পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে চিনে মাঞ্জা কিনতে হল।’’
এর মধ্যে বর্ধমানের নতুনগঞ্জের একটি দোকানে কিছুটা সচেতনতা দেখা গেল। দোকান মালিক বৈজ্যনাথ মোস্তাফির দাবি, ‘‘অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে সুত, ঘুড়ি কিনতে আসেন। শিশুদের হাতে কোনও ভাবেই এই সুতো দেওয়া হয় না।’’ এ বার চিনে মাঞ্জা বাদ দিয়ে সাধারণ মাঞ্জার সুতোই শুধু দোকানে রয়েছে, তাঁর দাবি।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক তথা পরিবেশ গবেষক সন্তু ঘোষ বলেন, ‘‘মানুষ তো বটেই আকাশে উড়ে চলা প্রচুর পাখি চিনে মাঞ্জার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।’’ তিনি আরও জানান, এই মাঞ্জায় এক ধরনের ‘সিনথেটিক পলিমার’ ব্যবহার করা হয়, যার মূল উপরণ চিন, তাইওয়ান থেকে আমদানি করতে হয়। তার সঙ্গে কাচ এবং ধাতব পদার্থ মিশে সুতোটি বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে পড়ে বলেও তাঁর দাবি। ফলে, বাড়ে বিপদ।
জেলা পুলিশের দাবি, বিষয়টি নিয়ে আগামী দিনে জেলা জুড়ে অভিযান চালানো হবে।