বিজেপি জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘খসড়া তালিকা প্রকাশ তো হল, ভোট হবে তো?
চার পুরসভায় ওয়ার্ড সংরক্ষণের খসড়া তালিকা বার হয়েছে শুক্রবার। কারও হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে দু’বারের জেতা আসন। কেউ আবার সংরক্ষণের জেরে ফেরার আশা দেখছেন পুরনো এলাকায়।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, তালিকা নিয়ে কোনও আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। এর জন্য জেলার পুর দফতরে বিশেষ ‘সেল’ খোলা হচ্ছে। বিরোধীরা অবশ্য পঞ্চায়েত ভোটের স্মৃতি উসকে সন্দিহান, ‘ভোটটা হবে তো?’
মেমারি ও দাঁইহাটে সংরক্ষণের আওতায় পড়ে গিয়েছে পুরপ্রধানের আসন। অনেক প্রভাবশালী কাউন্সিলরেরও জিতে আসা আসনে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। কালনা, কাটোয়াতেও বদলেছে অনেক অঙ্ক। জেলার আরও দু’টি পুরসভা বর্ধমান ও গুসকরায় অবশ্য খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। আপাতত প্রশাসক রয়েছে সেখানে।
খসড়া তালিকায় দেখা যাচ্ছে, কাটোয়া শহরের প্রভাবশালী কাউন্সিলর, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না। ওই ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। বারবার বিতর্কে জড়ানো কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডটিও তফসিলি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত। ২০১৫ সালে কাটোয়া পুরভোটে ১০টি করে আসন পেয়েছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস। অমর রামের নেতৃত্বে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। কয়েকমাস পরে কংগ্রেসের ১০ জন তৃণমূলে যোগ দেন। পরবর্তীতে অমর রামের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে পুরপ্রধান হন রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, “এটা নির্বাচনের অঙ্গ। খসড়া তালিকা দেখে কারও আপত্তি থাকলে জানানো যেতে পারে।’’
২০১৫ সালে পুরভোটে দাঁইহাটে ১৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম ন’টি আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে। তৃণমূল পেয়েছিল তিনটি, কংগ্রেস ও বিজেপি পেয়েছিল একটি করে আসন। কাটোয়ায় দলবদলের সময়ে কংগ্রেসের একমাত্র কাউন্সিলর তৃণমূলে চলে যান। কয়েক মাস পরে সিপিএমের ছ’জনও তৃণমূলে যোগ দেন। অনাস্থা এনে সিপিএমের পুরপ্রধান বিদ্যুৎ ভক্তকে সরিয়ে তৃণমূলের শিশির মণ্ডল পুরপ্রধান হন। এ বার ১২ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্যে সংরক্ষিত হওয়ায় শিশিরবাবু সেখান থেকে দাঁড়াতে পারবেন না। এক নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতা বিদ্যুৎবাবুর আসনটিও সংরক্ষণের আওতায় পড়েছে।
মেমারিতেও নিজের জেতা আসন ছাড়তে হবে দু’বারের পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীকে। আসন হারাতে হচ্ছে পুরসভার প্রভাবশালী কাউন্সিলর তৃণমূলের বিদ্যুৎ দে, রত্না দাস, শেখ আসাদুল্লা ও সিপিএমের মানু ভট্টাচার্যকেও। যদিও প্রত্যেকেরই দাবি, এটা ভোটের অঙ্গ। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।
কালনাতেও জেতা ওয়ার্ডে এ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না উপপুরপ্রধান-সহ তৃণমূলের চার কাউন্সিলর। গত বার তিন ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছিলেন যথাক্রমে সুনীল চৌধুরী ও গোকুলচন্দ্র বাইন। এ বার আসন দু’টিই তফসিলি সংরক্ষিত। উপপুরধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটিও তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সমরজিৎ হালদারকেও ছাড়তে হবে আসন। তবে এ বারের তালিকা অনুযায়ী, প্রাক্তন দুই পুরপ্রধান চাইলে ফের নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন। এর আগে সংরক্ষণের জেরে সিপিএমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ গোস্বামীকে সাত নম্বর ওয়ার্ড ছেড়ে দাঁড়াতে হয়েছিল চার নম্বর ওয়ার্ডে। তৃণমূলের বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছেড়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাত নম্বরে। গৌরাঙ্গবাবু জিতলেও হেরে যান বিশ্বজিৎবাবু। এ বার ওই দু’টি ওয়ার্ডই সাধারণ।
কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘তালিকা অনুযায়ী, দলের যে সমস্ত কাউন্সিলেরেরা নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না তাঁদের মধ্যে যাঁদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ এবং পাঁচ বছর ধরে ভাল কাজ করছেন, তাঁরা যাতে অন্য ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারেন তার জন্য ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে আবেদন করব।’’
বিজেপি জেলা সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘খসড়া তালিকা প্রকাশ তো হল, ভোট হবে তো?” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমরা চাই, গণতান্ত্রিক ভাবে ভোট হোক।’’