কর্মসূচিতে প্রতিমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একশো দিনের প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলে কোথাও সই সংগ্রহ, কোথাও মিছিল করে নিয়মিত সরব হচ্ছে তৃণমূল। যদিও রাজ্য হিসাব দিচ্ছে না বলেই টাকা আটকে রয়েছে, দাবি করলেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। বুধবার পূর্বস্থলীর অন্নপূর্ণা লজে দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে একশো দিনের প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে না, এটা ঠিক নয়। রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী একশো দিনের কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে কাজের হিসাব তো দিতে হবে। এজি রিপোর্ট না দিলে কেন্দ্র টাকা তো আটকাবেই।’’
যদিও তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র তথা কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজ সাধারণ মানুষের অধিকার। রাজ্যের সাধারণ মানুষের টাকা আটকে রেখে কেন্দ্র বঞ্চনা করেছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যতবার আসেন, ততবার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে মিথ্যা বলেন।’’
এ দিন রাজ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়েও সরব হন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কোন ছবি চলবে, আর কোন ছবি চলবে না, তা দেখার জন্য সেন্সর বোর্ড রয়েছে। আমি দেখিনি। তবে যতদূর জানি এই ছবিতে এক মহিলার নির্যাতনের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা। তাই মহিলার উপরে অত্যচারের কাহিনি নিয়ে তৈরি ছবিটির উপরে নিষেধাজ্ঞা উচিত হয় নি।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেকের বেশি সময় ধরে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের সংগঠনকে শক্তিশালী করার দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এ দিন ওই বৈঠকে কালনা, কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর এবং পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের মণ্ডল সভাপতি, বিভিন্ন মোর্চার সভাপতি, জেলা এবং রাজ্য পর্যায়ের বিভিন্ন পদাধিকারীদের ডাকা হয়। পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তিন নম্বর মণ্ডল সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস জানান, তৃণমূলের দ্বারা যে সমস্ত কর্মীরা অত্যাচারিত হয়েছিলেন, বিশেষ করে যাঁদের মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলির কী পরিস্থিতি, সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতি, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি কী ভাবে জনমানসে তুলে ধরা হবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন এবং গণনা পর্বে নিরাপত্তার ব্যাপারেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন। রামর্শ দিয়েছেন বুথকে শক্তিশালী করার। বৈঠকে থাকা বিজেপির জেলা নেত্রী মৌসুমি মণ্ডল বলেন, ‘‘বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে দল যাতে জয়লাভ করে সে ব্যাপারে এখন থেকে কী করতে হবে তা কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।’’
ওই বৈঠকের পরে পূর্বস্থলীর চৌরঙ্গী এলাকার মাঠে ‘কৃষক সম্পর্ক সম্মেলন’ নামে একটি অনুষ্ঠানে যান তিনি। সেখানে চাষিদের জানান, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে সমবায় ব্যবস্থা দারুণ ভাবে গড়ে উঠেছে। সমবায়ের মাধ্যমে চাষিরা যেমন ঋণ পান, তেমন সমবায়ের গুদামে চাষিরা ফসল রেখে দিতে পারেন। দাম বাড়লে ওই ফসল বিক্রি করা যায়। কেন্দ্র সরকার চাষি এবং গরিবদের জন্য বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্প গড়েছে বলে জানান তিনি। কেন্দ্রের ফসল বিমা যোজনা নিয়ে এ রাজ্যে রাজনীতি হয় বলেও দাবি করেন। দুপুরে এক মণ্ডল সভাপতির বাড়িতে খাবার খান তিনি। কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর এলাকার একটি লজে রায়না, জামালপুর এবং মেমারি বিধানসভার দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় ‘জনজাতি সম্পর্ক সম্মেলন’ নামে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী বুথকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।’’