ফাইল চিত্র।
শহরের প্রতিটি মোড়ে উঁচু আলোকস্তম্ভ। গলিতে গলিতে ত্রিফলা বাতি। পানীয় জল সরবরাহের জন্য একাধিক বুস্টিং পাম্প। কিন্তু গরম পড়ার মুখে শহরবাসী পানীয় জল পাবেন কি না, রাস্তায় আলো জ্বলবে কি না— প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মেমারিতে। পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কয়েকমাস ধরে বিদ্যুতের বিল মেটানো হয়নি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যে কোনও দিন পুরসভার বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন করে দিতে পারে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। পুরভোটের মুখে এ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। যদিও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কর্তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি পর্যন্ত গত কয়েক মাসে মেমারি পুরসভার বিদ্যুতের বিল বাবদ বাকি রয়েছে প্রায় এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। সেই টাকা চেয়ে প্রতি মাসে পুরসভাকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যে ওই টাকা না পেলে মার্চে ‘স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’কে (সুডা) চিঠি পাঠিয়ে ‘মেমারি গ্রুপ ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই’ টাকা চাইবে বলে বণ্টন সংস্থা সূত্রের দাবি। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘জানুয়ারি পর্যন্ত এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকার সঙ্গে চলতি মাসে আরও দশ লক্ষ টাকা বকেয়া যোগ হবে। এ মাসের মধ্যে বিল মেটাতে না পারলে সুডার কাছ থেকে টাকা চাওয়া হবে। অনেক পুরসভার বিদ্যুতের বিল এ ভাবে মিটিয়ে থাকে সুডা।’’
বিদ্যুতের বিল বাকি থাকার বিষয়টি জানাজানি হতেই বিরোধী দলের কাউন্সিলরেরা সরব হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাসক দলের এক নেতার অভিযোগ, ‘‘মিউটেশন, সম্পত্তি কর বাবদ প্রতি বছর পুরসভার আয় বাড়ছে। সেখান থেকে কেন বিদ্যুতের বিল শোধ করা হচ্ছে না? পুরবোর্ডে এ নিয়ে কোনও আলোচনাই হয় না।’’ পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর শ্যামল সরকারের প্রশ্ন, ‘‘নিজস্ব তহবিল থেকে বিদ্যুতের বিল মেটানোর কথা। সেখানে সুডা টাকা মেটালে উন্নয়নের অর্থে কোপ পড়বে, সেটা কি শাসক দল বুঝতে পারছে?’’ শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর মানু ভট্টাচার্যের আবার অভিযোগ, ‘‘একে মেমারি পুর এলাকার উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। তার উপরে কাজের টাকা থেকে বিদ্যুতের বিল মেটানো হলে ত্রিফলা আলো কী উদ্দেশ্যে বসানো হল, সে প্রশ্ন তো উঠবেই।’’
পুরভোটের আগে পুরসভার বিদ্যুতের সংযোগ কাটা হলে দল যে অস্বস্তিতে পড়বে, তা কাউন্সিলরেরা মেনে নিচ্ছেন। তাঁদের একাংশের দাবি, সোমবারই পুরসভায় কর্তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইবেন। মেমারির পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীকে শনিবার বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্তের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। শহরবাসীর অসুবিধা হবে, এমন কোনও কাজ আমরা করি না।’’