সাইকেল নিয়ে জ্যোতির্ময়বাবু। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’-এর জেরে চলছে না বাস, ট্রেন। রুজি আর কর্তব্যের টানেই ১২০ কিলোমিটারের বেশি পথ সাইকেলে চালিয়ে এসে কাজে যোগ দিলেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কালনা ডিপোর এক কর্মী। জ্যোতির্ময় ঘোষ নামে বছর আটত্রিশের ওই কর্মীর দাবি, সাধারণ মানুষের নিরাপদে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে কাজে যোগ দেওয়াটা জরুরি। জ্যোতির্ময়বাবুর সহকর্মী শঙ্কর দে, রবিন মণ্ডলেরা জানান, ডিপোয় আসার পরেই ওই কর্মীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
কালনা ডিপো সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের তালিবপুর এলাকার মাতোয়া গ্রামের বাসিন্দা জ্যোতির্ময়বাবু ২০১১ সাল থেকে এখানে নিরাপত্তা রক্ষী হিসাবে কাজ করছেন। বাসডিপোর একটি ঘরেই থাকেন তিনি। মাসে ২৬ দিন কাজ করে সাড়ে ছ’হাজার টাকার কিছু বেশি বেতন পান। কাজে কামাই হলে কাটা যায় বেতন। জ্যোতির্ময়বাবু জানান, ২১ মার্চ বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। ‘জনতা কার্ফু’ এবং ছুটির কারণে পরের দু’দিন কাজে যোগ দেননি। তার মধ্যেই ২৪ মার্চ থেকে ‘লকডাউন’ জারি হয়ে যায়। তাঁর দাবি,
কাজ বন্ধ থাকলেও মাসের শুরুতে বেতন বাবদ কিছু টাকা পেয়েছেন তিনি।
ওই কর্মীর দাবি, বাড়িতে থাকলেও নিয়মিত ডিপোর খোঁজখবর রাখতেন তিনি। সম্প্রতি জানতে পারেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানো, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের মতো জরুরি কাজে সরকারি বাসের প্রয়োজন পড়ছে। এর পরেই কী ভাবে কাজে যোগ দেবেন, শুরু হয় চিন্তা।
তিনি জানান, বাড়িতে একটি ভাঙা সাইকেল ছিল। বাজারহাট, কাছাকাছি যাতায়াত করা যেত তাতে। কিন্তু দূরের পথ যাওয়া মুশকিল। অগত্যা ‘লকডাউন’-এর মধ্যেই এক বন্ধুকে অনুরোধ করে সাইকেল সারিয়ে নেন তিনি। বেঁধে নেন ছোট গ্যাস, রান্নার বাসন, শুকনো খাবারের মতো প্রয়োজনীয় নানা জিনিস। সাইকেলেই রওনা দেন কালনা। জ্যোতির্ময়বাবুর কথায়, ‘‘কোনও দিন এতটা রাস্তা সাইকেল চালাইনি। রোদের তাপে টানা চালাতেও পারছিলাম না। কাটোয়া, নাদনঘাটের মতো জায়গায় গাছের তলায় সাইকেল রেখে বিশ্রাম করেছি। সঙ্গে থাকা চা, খাবার খেয়েছি। তার পরে আবার রওনা দিয়েছি।’’ নান্দাই সেতুর কাছে সাইকেলের টায়ার পাংচার হয়ে গিয়েছিল তাঁর। তবে স্থানীয় ভাবেই সারিয়ে নেন। ১২ ঘণ্টার চেষ্টায় এসে পৌঁছন কালনায়।
পথে কষ্ট হলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজে যোগ দিতে পেরে খুশি তিনি। তাঁর দাবি, বাড়িতে স্ত্রী, মেয়ে, বৃদ্ধ মা রয়েছেন। তাঁরা বারবার নিষেধ করেছেন, উদ্বিগ্ন হয়েছেন। কিন্তু এই সময়ে কাজে যোগ দেওয়াটা জরুরি বলে তাঁদের বুঝিয়েছেন তিনি।
ডিপো ইনচার্জ সৌমেন দাস বলেন, ‘‘উনি নিজের উদ্যোগেই কাজে এসেছেন। কাজের প্রতি ওই কর্মীর নিষ্ঠা খুবই প্রশংসনীয়।’’ কালনার মহকুমাশাসক সুমনসৌরভ মহান্তি বলেন, ‘‘জরুরি প্রয়োজনে সরকারি কর্মীরা আন্তঃজেলা যাতায়াত করতে পারেন। ওই কর্মীর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। তবে সব রকম সতর্কতা
নেওয়াও জরুরি।’’