খাবার দিচ্ছেন তনুপবাবু। নিজস্ব চিত্র
মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়েই এদের জীবন বাঁচে ‘লালু’, ‘বুঁচি’দের। লকডাউনের বাজারে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ। এই অবস্থায় তাদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে এগিয়ে এসেছেন দুর্গাপুর জিআরপি’র আধিকারিক তনুপ পাল। এখন তাদের দু’বেলা জুটছে মুরগির মাংস আর ভাত।
সারমেয় লালু, বুঁচিরা সংখ্যায় ১০-১২। দুর্গাপুর স্টেশন চত্বরে ওরা দাপিয়ে বেড়ায়। স্টেশনের বাইরে বেশ কয়েকটি হোটেল, খাবারের দোকান রয়েছে। সেখান থেকেই খাবার জুটে যায় ওদের। কিন্তু এখন সেই পথ বন্ধ। তবে স্টেশন চত্বরের সারমেয়কূলের জন্য মুশকিল আসান হয়ে হাজির হন তনুপবাবু। এই আধিকারিকের বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ায়। আগে ছিলেন দুর্গাপুরের লাউদোহা (ফরিদপুর) থানায়। তার পরে কালনা, শেওড়াফুলি ও কামারকুণ্ডু। ৩ মার্চ থেকে রয়েছেন দুর্গাপুর জিআরপিতে। যেখানেই যান আপন করে নেন সারমেয়দের। পকেটে থাকে বিস্কুট। অনেক কুকুরের মধ্যে বিশেষ কাউকে কাউকে মনে ধরে যায় তাঁর।
যেমন, কামারকুণ্ডুর ‘কালু’র কথা তিনি ভোলেননি। নাইট ডিউটি করার সময়ে খুব সাহায্য করত সে, বলে জানান তনুপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘রাতে স্টেশনে ডিউটি করতে করতে বুঝতে পারছি, অসৎ উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছে কেউ। কিন্তু আইন মোতাবেক কিছু করা যাবে না। ‘কালু’কে একবার খোঁজ নিতে বললেই সে হাঁকডাক করে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে তবে ফিরে আসত।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুর্গাপুরে এসে লালু, বুঁচিদের সঙ্গে পরিচয় হয় তনুপবাবুর। তখন ওরা রাস্তার কুকুর হিসাবেই পরিচিত ছিল। তনুপবাবু শুধু বিস্কুট দিতেন। কিন্তু ‘লকডাউন’ শুরুর পরে তাদের দু’বেলা খাবারের দায়িত্ব নিয়ে নেন তিনি। তার পরে থেকেই স্টেশনই হয়ে গিয়েছে ওদের ঘরবাড়ি। তনুপবাবু স্টোভ, কড়াই, গামলা কিনেছেন। সকালে সেন মার্কেট থেকে মুরগির মাংস কিনে আনেন। ব্যারাকে নিজেই ভাত ও মুরগির মাংস রান্না করেন। এর পরে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে হাঁক পাড়তেই দৌড়ে চলে আসে ওরা। তনুপবাবু বলেন, ‘‘মাংস দিয়ে চেটেপুটে সব ভাত খেয়ে নেয় ওরা। এক দিন মাংস আনার সময় হয়নি। শুধু ভাত দিই। দেখি ভাত পড়েছিল। তার পরে থেকে সকালে বাজার থেকে মাংস নিয়ে চলে আসি।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তনুপবাবুর একজন পরিচিত পশুচিকিৎসক রয়েছেন। লালু, বুঁচিদের কোনও সমস্যা হলে তিনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধ জেনে খাইয়ে দেন। মাঝে একদিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। তখন এক জনকে টাকা দিয়ে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন, ওদের খাওয়ানোর জন্য। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে ওরা খাবে কী? তাই এটুকু করি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)