—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
খাদ্য ভবনে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠকের পরে চালকল মালিকেরা জানালেন, তাঁরা সহায়ক মূল্যে ধান কিতে রাজি। বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে চালকল মালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশন’-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কলকাতায় বৈঠকে বসেন খাদ্যমন্ত্রী, কৃষি উপদেষ্টারা। সেখানে চালকল মালিকদের ন’দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি মানার ইঙ্গিত পাওয়ার পরেই চালকল সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে তাঁরা খাদ্য দফতরের সহযোগী অত্যাবশকীয় পণ্য নিগম, বেনফেডের মতো সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপাক্ষিক
চুক্তিতে রাজি।
রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “চালকল মালিকদের কিছু দাবি ছিল। সেগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার থেকেই চুক্তি শুরু হয়ে যাবে। সহায়ক মূল্যে ধান সংগ্রহ কিংবা ভাঙানোয় কোনও বাধা থাকবে না।”
এ দিন শুরুতেই ধান ভাঙানোর খরচ নিয়ে আলোচনা হয়। চালকল মালিকেরা এক কুইন্টাল ধান ভাঙাতে কত খরচ, তার একটা হিসাব দেন। তাঁদের দাবি, এক কুইন্টাল ধান ভাঙাতে প্রত্যক্ষ খরচ হয় ৯৩ টাকা। এর বাইরে পরোক্ষ খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে এক কুইন্টাল ধান থেকে সরকারকে ৬৮ কেজি চাল দিতে খরচ হয় ১১০-১৩০ টাকা। সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে চালকল মালিকেরা সরকারের কাছ থেকে ৩০ টাকা পান। ওই টাকায় সহায়ক মূল্যে ধান নিয়ে চাল দেওয়া কার্যত অসম্ভব।
খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, “মিলিং চার্জ বাড়ানোর জন্য নবান্নে ফাইল পাঠানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেই আর্জি মেনেছেন। চালকল মালিকদের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে রাজি হয়েছেন।”
আলোচনা হয় শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত দাবি নিয়েও। চালকল মালিকদের দাবি, এক কুইন্টাল চালের জন্য ন্যূনতম ২০ টাকা মজুরি দরকার। সেখানে ২০১৬ সাল থেকে সরকার ১২ টাকা মজুরি চলছে। ‘বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশন’-র দাবি, বৈঠকে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে। পরিবহণ খরচ নিয়ে নতুন করে দরপত্র ডাকার দাবিতেও খাদ্য দফতরের কর্তারা সহমত জানিয়েছেন। তবে আগামী মরশুমে নতুন করে দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্তারা। চালকল মালিকদের ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’ নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল। এ দিনের আলোচনার পরে তাঁরা জানান, তাঁদের দাবি মেনে ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’র আড়াই গুণ পর্যন্ত পর্যন্ত ধান ভাঙানোর জন্য পাবেন চালকল মালিকেরা অর্থাৎ ১০০ টাকা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিলে ২৫০ টাকার ধান পাবে চালকলগুলি।
খাদ্য দফতরের দাবি, রাজ্যে ১১ লক্ষ টন চাল রাখার সুবিধা রয়েছে (পূর্ব বর্ধমানে আড়াই লক্ষ টন)। অথচ রাজ্যে গণবন্টন ব্যবস্থায় বা সরকারি সাহায্যের জন্য বছরে চালের প্রয়োজন হয় ৩০-৩৫ লক্ষ টন। পূর্ব বর্ধমানের ভাঙানো চাল রাজ্যের ৮টি জেলায় সরবরাহ করা হয়। গত বছর রাজ্যে ৫৮৫টি চালকল চুক্তি করেছিল, তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমানেই ১০৩টি। এ বছর ৬৫৩টি চালকলের সঙ্গে চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে খাদ্য দফতর।
চালকল সংগঠনের বড় আপত্তির জায়গা ছিল, সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার পরে তিন মাস পর্যন্ত গুণগত মান ভাল থাকার নির্দেশ নিয়ে। তাঁরা জানান, পূর্ব বর্ধমান থেকে মেদিনীপুরে চাল যাচ্ছে। সেখানকার গুদামের কী পরিস্থিতি, কী ভাবে চাল রাখছে–তা তাঁদের অজানা। ফলে তিন মাস চাল ভাল থাকবে কি না তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। চালকলগুলিকে কেন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ধান নিতে হবে, সেই প্রশ্নও ওঠে।
সংগঠনের রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি বলেন, “বেশ কিছু দাবি সরকার মেনে নিয়েছেন। তিন মাসের চাল রাখা নিয়েও মৌখিক নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে চুক্তি করলে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা চালকল মালিকদের চুক্তি করার জন্য
জানিয়ে দিচ্ছি।”