সমুদ্রগড়ের হাটে। নিজস্ব চিত্র।
করোনা সংক্রমণ, গণ-পরিবহণে নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বার তলানিতে নেমে গিয়েছিল তাঁতের হাটের বিক্রি। এ বার পরিস্থিতি কিছুটা ভাল, বলছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, গত দু’সপ্তাহ ধরে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। পুজো যত কাছে আসবে, ততই ক্রেতা বাড়বে বলেও তাঁদের আশা।
কালনা মহকুমার সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামে তাঁতের শাড়ির সুনাম রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে, পুজোর মাস দু’য়েক আগে থেকে জোরকদমে বাজার শুরু হয়ে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ে তাঁতের হাটে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, ক্রেতারাও নতুন ধরনের শাড়ি খুঁজতে ভিড় জমান। তাঁতিদের দাবি, গত বছর ব্যবসা একেবারেই হয়নি। এ বার অনেকাংশেই ট্রেন, বাস চলতে শুরু করেছে। টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে বহু মানুষের। ফলে, অনেকেই করোনা-ভীতি কাটিয়ে শাড়ি কিনতে আসছেন।
ধাত্রীগ্রাম এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুর এলাকায় দু’টি সরকারি তাঁতের হাট রয়েছে। হস্তচালিত তাঁত উন্নয়ন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অগস্ট ধাত্রীগ্রামের হাটে শাড়ি বিক্রি হয় ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার। শ্রীরামপুর হাটে শাড়ি বিক্রি হয় ৫৯,৬০০ টাকার। ১ সেপ্টেম্বর ধাত্রীগ্রাম হাটে শাড়ি বিক্রি হয় ৩ লক্ষ ১২ হাজার ৫৬০ টাকার এবং শ্রীরামপুর হাটে শাড়ি বিক্রি হয় ৫১,৩০০ টাকার। ৪ সেপ্টম্বর ধাত্রীগ্রাম হাটে শাড়ি বিক্রি হয় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৪০ টাকার এবং শ্রীরামপুর হাটে শাড়ি বিক্রি হয় ৪২,৪২০ টাকার। মহকুমা হ্যান্ডলুম আধিকারিক পলাশ পাল বলেন, ‘‘পরিসংখ্যান বলছে, হাটে ক্রমশ বিক্রি বাড়ছে। আমাদের আশা, পুজোর আগে আরও বাড়বে।’’
বিক্রি বাড়ছে বেসরকারি হাটেও। সমুদ্রগড় এলাকার ‘গণেশচন্দ্র তাঁত কাপড়ের হাট’-এর এক মালিক সুবীর কর্মকারের দাবি, সপ্তাহ দু’য়েক ধরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কলকাতা, অসম, ওড়িশা থেকে ক্রেতারা আসছেন। তাঁর দাবি, ‘‘করোনা-সংক্রমণ বর্তমানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ হয়েছে। সে কারণেই ক্রেতারা আসছেন।’’ শাড়ি বিক্রেতা অনন্ত বসাক, প্রদীপ কুণ্ডুরা বলেন, ‘‘গত পুজোয় শাড়ি বিক্রি তলানিতে নেমে গিয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। ক্রেতাদের ঝোঁক, কম দামের মিনাকারি, হ্যান্ডলুম, জামদানিতে।’’
তবে হাটে ব্যবসা বাড়লেও লক্ষ্মীলাভ সে ভাবে নেই, দাবি তাঁতিদের। তাঁরা জানান, একেবারে বিক্রি না হওয়ার থেকে দাম কম রেখে শাড়ি বিক্রি করে দিতে চাইছেন অনেকে। গত বারের বোনা বহু শাড়িও কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আবার বরাত কম হওয়ার মজুরিও কমেছে কিছু ক্ষেত্রে। তাঁত শিল্পী হুমায়ূন শেখ বলেন, ‘‘পদ্ম নকশা শাড়ির দাম ৪২০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৩৫০ টাকায়। এই শাড়িতে মজুরিও কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।’’ তবে ক্রেতার আনাগোনা যে বেড়েছে, তাতে খুশি তাঁরা।