দু’দিনের বৃষ্টিতেই জলবন্দি

আসানসোলের রেলপাড়ে শতাধিক বাড়িতে ঢুকেছে গারুই নদীর জল। একই হাল মুতসুদ্দি মহল্লা, বাবুয়া তলা, আজাদ বস্তি, কশাইমহল্লা এবং কবরস্থান লাগোয়া এলাকাগুলির।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৯
Share:

জল-ছবি: কুলটিতে পথেই সাঁতার। —নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে পশ্চিম বর্ধমানের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। পাঁচিল ধসে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১৯.৯ মিলিমিটার। জল বেড়েছে গারুই ও নুনিয়া নদীতে।

Advertisement

আসানসোল

Advertisement

আসানসোল পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মুর্গাসোলের নীচু পাড়া ও এসপি মুখোপাধ্যায় রোড, দিলদার নগর, হাটনরোড, গড়াই রোড লাগোয়া বেশ কিছু এলাকা, বারাবনির রেল বস্তি, সালানপুরের ডাবর কোলিয়ারি কার্যালয় জলমগ্ন। আসানসোলের রেলপাড়ে শতাধিক বাড়িতে ঢুকেছে গারুই নদীর জল। একই হাল মুতসুদ্দি মহল্লা, বাবুয়া তলা, আজাদ বস্তি, কশাইমহল্লা এবং কবরস্থান লাগোয়া এলাকাগুলির। এ ছাড়া আসানসোল স্টেশন লাগোয়া ডিপোপাড়া ও চাঁদমারি এলাকায় দু’টি রেল টানেল জলমগ্ন।

দুর্গাপুর

দুর্গাপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু অংশে তামলা নালার জল বাড়িতে ঢুকেছে। ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড, বিদ্যাসাগর পল্লি, চাষিপাড়া, শ্রীনগরপল্লি, বিভিন্ন বস্তি, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের গৌরবাজার, কৈলাশপুর, আমদহি, মাধাইগঞ্জ একাংশও জলমগ্ন। গাছ ভেঙেছে বিধাননগর, লিঙ্ক পার্কে।

কুলটি

এখানে সবথেকে খারাপ অবস্থা আসানসোল পুরসভার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিয়া কলোনির। মঙ্গলবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বুক সমান জল বইছে রাস্তা দিয়ে।

রানিগঞ্জ

রানিগঞ্জের হুসেন নগর, বাসস্ট্যান্ড থেকে রেল স্টেশন যাওয়ার রাস্তা, স্টেশনের প্রতীক্ষালয়ে জল ঢুকে বিপত্তি ঘটেছে। রানিগঞ্জের মোর্গাথোলে দিনভর রাস্তা অবরুদ্ধ রয়েছে জলে।

জামুড়িয়া ও অন্ডাল

দু’নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া জামুড়িয়ার সাতগ্রাম ফটক, বাউরিপাড়া, মর্ডান সাতগ্রামে জল ঢুকেছে। অজয় নদ লাগোয়া দরবারডাঙা, বড়কোলা, বাগডিহা অস্থায়ী সেতু জলমগ্ন থাকায় বীরভূমের সঙ্গে বর্ধমানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। অন্ডালের শ্রীরামপুরে রেল সেতু, টানেল জলমগ্ন।

ক্ষয়ক্ষতি

আসানসোলের গোধূলি রোডে পাঁচিল ধসে মৃত্যু হয়েছে চিন্তা রজক (৩৮) নামে এক পথচারীর। পাক্কাবাজার ও জামা মসজিদ-সহ আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫টি বাড়ি ও পাঁচিল এবং অন্ডালের রামপ্রসাদপুর, শ্রীরামপুর ও উখড়া পঞ্চায়েত এলাকায় ৩৯টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, ২৫টি খোলামুখ খনিতে কাজ ব্যাহত হয়েছে। ফি দিন প্রায় ১৮ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে নীলাদ্রিবাবুর দাবি। কাঁকসা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার শ’খানেক মাটির বা়ড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁকসার শিবপুর, রাজহাট, বিনোদপুরে চাষজমি এবং মানকর, কসবা, মাড়ো-সহ বিভিন্ন গ্রামে রাস্তা জলমগ্ন। দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের নতুন আদালত ভবনের সীমানা পাঁচিলের একাংশ
ভেঙে গিয়েছে।

প্রশাসনের ব্যবস্থা

আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রানিগঞ্জের হুসেন নগরের জলবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে রনাই মসজিদ ও বিভিন্ন লজে রাখা হয়েছে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ওই এলাকায় পাঠানো হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরসিদ আলি কাদরির নেতৃত্বে আসানসোল রেলপাড় এলাকায় উদ্ধারকাজ চলে। বিডিও (জামুড়িয়া) অনুপম চক্রবর্তী জানান, কেন্দার বাউরি ও রুইদাসপাড়ার বাসিন্দাদের জন্য কেন্দা উচ্চবিদ্যালয়ে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। মেয়র জিতেন্দ্রবাবু এবং জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী, মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা, বিডিও (কাঁকসা) অরবিন্দ বিশ্বাসেরা জানান, বিপর্যয় মোকাবিলা দল, হাসপাতাল-সহ সমস্ত জরুরি পরিষেবা পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছে। দুর্গাপুর পুরসভার কমিশনার অমিতাভ দাস জানান, জলমগ্ন এলাকায় ত্রাণ ও ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement