গরমে জল মেলে না, ক্ষোভ পুরসভার কাজে

গরম পড়তে না পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে পানীয় জলের আকাল। কোথাও কুয়োর জলস্তর নেমে গিয়েছে। তা থেকে ঘোলা জল উঠছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা ঠিক মতো জল সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে নানা এলাকায়। অথচ এই পরিস্থিতিতে কোথাও কোথাও পুরসভার জল গাড়ি ধোওয়ার মতো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। পুরসভার অবশ্য আশ্বাস, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে নানা পরিকল্পনা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৫ ০২:০১
Share:

কুয়োর জলস্তর ঠেকেছে তলানিতে।

গরম পড়তে না পড়তেই শুরু হয়ে গিয়েছে পানীয় জলের আকাল। কোথাও কুয়োর জলস্তর নেমে গিয়েছে। তা থেকে ঘোলা জল উঠছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভা ঠিক মতো জল সরবরাহ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে নানা এলাকায়। অথচ এই পরিস্থিতিতে কোথাও কোথাও পুরসভার জল গাড়ি ধোওয়ার মতো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। পুরসভার অবশ্য আশ্বাস, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে নানা পরিকল্পনা হয়েছে।

Advertisement

দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের কয়েকটিতে পানীয় জলের বেশ সমস্যা রয়েছে। কোথাও পাইপ লাইনে পর্যাপ্ত জল আসে না। আবার কোথাও পাইপই না থাকায় ভরসা কুয়ো বা নলকূপ। সেগুলি গরম পড়তেই শুকিয়ে যেতে বসেছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সেপকো টাউনশিপে দিন দুয়েক আগে জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। এলাকাবাসীর দাবি, এখানে জলের সমস্যা বরাবরই বেশি। মাঝে-মাঝে এলাকার একাংশে জল মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দা দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, পুরসভার পাইপলাইনে জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বছরের নানা সময়ে। তাঁর কথায়, “জলের অভাবে অনেক সময় আশপাশের আত্মীয়দের বাড়িতেও যেতে হয় আমাদের।”

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণেন্দু আচার্য জানান, পাম্পিং স্টেশন খারাপ থাকায় জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়েছিল। তবে এখন সমস্যা নেই। তিনি জানান, সেপকো এলাকা শহরের অন্য জায়গার থেকে বেশ উঁচু। যখন এই এলাকায় পাইপলাইন বসানো হয়েছিল তা পরিকল্পনা মাফিক হয়নি। তাই সেপকোর একটি অংশে জলের সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, “এই সমস্যা দূর করার জন্য পুরসভায় আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।” এই ওয়ার্ডের কাশীরাম বস্তি এলাকাতেও পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আইনি জটিলতায় সেখানে পাইপলাইন পাতা যায়নি। তবে গরমের সময় ট্যাঙ্কারে করে জল পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়।

Advertisement

৩ নম্বর ওয়ার্ডের আইনস্টাইন-জেসি বোস এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের পানীয় জলের জন্য ভরসা কুয়ো। এ ছাড়া এই এলাকায় জলের আর কোনও ব্যবস্থা নেই। তাঁদের দাবি, গরম পড়তেই কুয়োর জলের স্তর অনেকটা নেমে গিয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “আর কয়েক দিন পরে হয়তো আর কুয়ো থেকে জল পাওয়া যাবে না। তখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।” বাসিন্দারা জানান, এই এলাকায় পুরসভার তরফে বেশ কয়েকটি কুয়ো তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে বেশির ভাগই ব্যবহারের অনুপোযোগী বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁদের আরও দাবি, গ্রীষ্মের সময় পুরসভা জলের ট্যাঙ্ক পাঠালেও তা মূল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে, অনেকটা হেঁটে জল বয়ে আনতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিতা শর্মা, মমতাবালা ভট্টাচার্যেরা বলেন, “বাড়িতে টিউবওয়েল বা পাম্প বসানোর সামর্থ্য নেই। তাই জলের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে।”

শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা গেলেও পুরসভার দেওয়া জল থেকে পাইপ লাগিয়ে গাড়ি ধোওয়া, রাস্তায় জল দেওয়ার দৃশ্য দেখা যায় অনেক সময়েই। সিটি সেন্টার, বিধাননগরের মতো এলাকায় এই দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। পুরসভার ট্যাঙ্ক থেকে জল রাস্তায় পড়ে যেতেও দেখা যায় অনেক সময়ে। এমন অপচয় বন্ধে পুর কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ দাবি করেছেন জলের সঙ্কটে ভুগতে থাকা এলাকার বাসিন্দারা।

পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ প্রমোদ সরকারের আশ্বাস, “দু’টি নতুন জলপ্রকল্প চালু হবে শীঘ্রই। তাতে আরও ১৯০ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ করা যাবে। জলের সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।” জল অপচয়ের অভিযোগ নিয়ে মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “জল অপচয় বন্ধের জন্য নাগরিকদের নানা ভাবে সচেতন করা হচ্ছে। অপচয় বন্ধে কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement