Memari Municipality

ভাসছে রাস্তা, বদ্ধ নর্দমায় সঙ্কটে স্বাস্থ্য

বাকি ন’টি ওয়ার্ডের জল ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাতার কাছে সেচখালে মিশবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবের মুখ দেখেনি।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ০৮:১৪
Share:

ফুটপাত জুড়ে রাথা দোকানের জিনিস। মেমারির কৃষ্ণবাজারে। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় তিরিশ বছর আগে ‘নোটিফায়েড এলাকা’ থেকে পুরসভা হয়েছে মেমারি। যোগাযোগের সুবিধা থাকায় বসতি বেড়েছে। ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। কিন্তু পুর পরিষেবার প্রশ্নে উঠে আসছে নানা ক্ষোভের কথা।

Advertisement

শহরবাসীর একাংশের দাবি, দু’একটি মূল রাস্তায় উন্নয়নের ছোঁয়া পেলেও বেশির ভাগ জায়গাতেই স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব রয়েছে। কোথাও নর্দমার জল আটকে রয়েছে, কোথাও আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে রাস্তায়। ভ্যাট উপচে পড়ছে। রাস্তার ঢালাই এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে। শিশু-উদ্যান বেহাল। এমনকি শহরের অনেক রাস্তায় আলো জ্বলে না বলেও জানিয়েছেন তারা।

মেমারির মানুষজনের অভিযোগ, শহরের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই নিকাশির সমস্যা রয়েছে। কোথাও নোংরা নয়ানজুলি, কোথাও বদ্ধ নর্দমা রোগ ছড়াচ্ছে। সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, গত কয়েক বছরে মেমারি শহরের নিকাশির ভোল পাল্টে গিয়েছে। পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী বলেন, ‘‘আমাদের আর্জি মেনে নাগরিকেরা একটু সচেতন হলেই নিকাশির বাকি সমস্যা নিশ্চিত ভাবে কেটে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো পুর পরিষেবার সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি।’’

Advertisement

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুরবোর্ড বামেদের দখলে থাকাকালীন পরিকল্পনা হয়েছিল, মধ্য মেমারির নিকাশির জল শহরের দক্ষিণ দিকের সাতটি ওয়ার্ড পেরিয়ে রেললাইন পার হয়ে দু’নম্বর ওয়ার্ডের ডিভিসি সেচখালে মিশবে। বাকি ন’টি ওয়ার্ডের জল ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তালপাতার কাছে সেচখালে মিশবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবের মুখ দেখেনি। ২০১০ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে নিকাশি নিয়ে বহু টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু অসমাপ্ত ও অপরিকল্পিত ভাবে কয়েকটি নর্দমা তৈরি ছাড়া কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের। তাঁদের ক্ষোভ, নালা নিয়মিত সাফাই হয় না। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার জল উপচে রাস্তা ভাসে। জমা জলে মশা-মাছির উপদ্রব হয়। নিকাশি ঠিকমতো হয় না বলে নর্দমার নোংরা, পোকামাকড় বাড়িতে ঢুকে যায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাতে হয়। দুর্গন্ধে জানলা খোলাও দায়। শুধু নর্দমা নয়, কলেজের কাছে, ফুলডুবির পাড়-সহ শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভ্যাটের গাড়ি উপচে আবর্জনা রাস্তায় পড়ে থাকে। নাকে রুমাল দিয়ে যাতায়াত করতে হয় মানুষজনকে। বিরোধীদের অভিযোগ, ওয়ার্ডভিত্তিক রিপোর্ট নিলে দেখা যাবে সুভাষনগরের ভিতরের নর্দমা পরিষ্কার হয় না। জিটি রোডের নয়ানজুলি আবর্জনায় ভর্তি। সুলতানপুর, চকদিঘির বড় নর্দমা পরিষ্কার হয় না। রেলের নয়ানজুলি, কৃষ্ণবাজারে নর্দমা, ছানাপট্টি-গ্রিনপার্ক এলাকা সাফাইয়ের অবস্থাও তথৈবচ। এর সঙ্গেই সোমেশ্বরতলা প্রাথমিক স্কুলের কাছে কালভার্ট ও ব্লক অফিসের কাছের কালভার্টটিও সাফ হয় না বলে জানান তাঁরা।

পুরসভা দাবি, কয়েক কিলোমিটার কাঁচা নর্দমা পাকা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে গাঙুর নদী সংস্কার করা হয়েছে। শহরকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে দু’শোর কাছাকাছি লোক নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এটা যে যথেষ্ট নয়, তা-ও মেনে নিচ্ছেন পুর-কর্তারা। এর সঙ্গেই শহরে নতুন সমস্যা, কৃষ্ণবাজার, স্টেশন রোডের মতো এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকানের সামগ্রী রাস্তা ধারে রাখছেন। মার খাচ্ছে শহরের সৌন্দর্য্য। শহরবাসীর দাবি, রাস্তার ধারে জিনিস, তার উপরে শ’য়ে শ’য়ে টোটোয় যাতায়াত করাই আতঙ্কের। মেমারি ব্যবসায়ী কল্যাণসমিতির সভাপতি রামকৃষ্ণ হাজরা বলেন, “রাস্তা-ফুটপাথ দখল করার একটা ব্যাধি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি। প্রশাসনও এগিয়ে আসুক। প্রয়োজনে যৌথ অভিযান করে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে।”

কিছু জায়গায় পানীয় জলের অপ্রতুলতা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। উপ-পুরপ্রধান সুপ্রিয় সামন্ত বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে।” এ দিনই সরকারি জায়গা, রাস্তা দখলমুক্ত করা, টোটো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মেমারিতে একটি প্রশাসনিক বৈঠক হয়। পুরসভার কর্তারা ছাড়াও মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ), বিধায়ক (মেমারি) মধুসূদন ভট্টাচার্যরা ছিলেন। ঠিক হয়েছে, যে সব ব্যবসায়ী রাস্তা দখল করে রয়েছেন তাদের তালিকা করা হবে। টোটো নিয়েও সতর্ক করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement