মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে জলাধার। আছে শুধু জল শোধনাগার। নিজস্ব চিত্র।
ফের ইসিএলের ‘ওভারহেড ট্যাঙ্ক’ (উচ্চ জলাধার) ভেঙে পড়ল অণ্ডালে। এ বারের ঘটনাস্থল কাজোড়া এরিয়ার পরাশকোল কোলিয়ারি এলাকা। শনিবার রাতের এই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও জলাধার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেখা দিয়েছে জলের-সঙ্কটও। রক্ষণাবেকক্ষণ না হওয়ার অভিযোগ অবশ্য মানেননি সংস্থা কর্তৃপক্ষ। তবে জলের সমস্যা মেটাতে আপাতত বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন এরিয়া কর্তৃপক্ষ।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ট্যাঙ্কে ২ লক্ষ ২২ হাজার গ্যালন জলধারণের ক্ষমতা ছিল। এর মাধ্যমে সংস্থার পরাশকোল কলোনি, অফিসার্স কলোনি-সহ লাগোয়া পরাশকোলডাঙা ও পরাশকোল গ্রামের একাংশে জল সরবরাহ করা হত। সিটু নেতা জয়ন্ত রায়, বিএমএস নেতা শ্রীমন্ত চট্টোপাধ্যায়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের পুরনো এই জলাধার রক্ষণাবেক্ষণ হত না। তাই জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। একাধিকবার শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে জলাধারটি সংস্কারের জন্য আবেদন জানালেও সংস্থা কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। এই এলাকার একাংশে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পাইপ লাইন আছে। তাতে মাঝে মধ্যে জল মেলে বলে দাবি। এই পরিস্থিতিতে ইসিএলের জলাধার ভেঙে যাওয়ায় প্রায় চারশো পরিবার বিপাকে পড়লেন। হয় জল কিনতে হবে। না হলে দূর থেকে জল সংগ্রহ করতে হবে।
এই জলাধারটি পরাশকোল-বহুলা সংযোগকারী রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে ছিল। তবে অফিসার্স কলোনি, পরাশকোল কলোনি থেকে প্রায় ৫০ ফুট দূরে ছিল। সকালে জলাধার ভেঙে পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা কানাইয়া চৌহ্বানের দাবি, জলাধার তো রক্ষণাবেক্ষণ হয়-ই না। তা ছাড়া কোনও নিরাপত্তীরক্ষী থাকেন না। তবে লাগোয়া জলশোধনাগারে এক জন করে কর্মী কাজ করেন। তবে রাতের দিকে সেখানেও কেউ থাকেন না। এ দিন রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ জলাধার ভেঙে পড়ার ঘটনায়র সময়ে জলশোধনাগারে কোনও কর্মী ছিলেন না। তাই হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রবিবার দেখা যায়, জল শোধনাগারের পিলারগুলিও জীর্ণ হয়ে পড়েছে। জলাধার ভেঙে পড়ায় শোধনাগারের পিলারগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অণ্ডাল থানার পুলিশ ও কাজোড়া এরিয়ার আধিকারিকেরা। প্রসঙ্গত, প্রায় দশ বছর আগে একই ভাবে বহুলায় একটি ইসিএলেরই ‘ওভারহেড ট্যাঙ্ক’ ভেঙে পড়েছিল। কাজোড়া এরিয়ার পার্সোনেল ম্যানেজার সঞ্জয় ভৌমিক বলেন, ‘‘শুনেছি প্রায় সাড়ে চার দশকের পুরনো পরাশকোলের এই জলাধার।’’ তাঁর দাবি, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়। তা ছাড়া, এটি ভেঙে নতুন একটি জলাধার তৈরির পরিকল্পনা আগে থেকেই আমাদের ছিল। তা বাস্তবায়নের আগেই এটি ভেঙে পড়ল। তবে রাতে ভেঙেছে বলে কোনও প্রাণহানি হয়নি। কারণ, বহু মানুষ দিনের বেলায় এর পাশ দিয়ে যাতায়াত করেন।’’