টালবাহানা চলছিল গোড়া থেকেই। দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে জোটের তরফে কখনও বাম, কখনও কংগ্রেস প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে নামও। শেষমেশ সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন শহরের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। শনিবার বিকেলে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে এ কথাই জানানো হয়েছে। যদিও বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘যা বলার রবিবার বলব।’’
দিন কয়েক আগে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করে। দেওয়াল লিখনও শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেস আসনটি দাবি করায় আবার সে সবে ভাটা পড়ে। মঙ্গলবার কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়, এই কেন্দ্রে আইএনটিইউসি নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা হচ্ছে। সেই মতো বিপ্রেন্দুবাবুকে দল সরে যেতে বলে দল। বৃহস্পতিবার স্বপনবাবু মনোনয়নও তোলেন। কিন্তু জোটের প্রার্থী হিসেবে স্বপনবাবুকে নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট ছিল না সিপিএম। শনিবার দুপুরে আবার বিপ্রেন্দুবাবু দাবি করেন, তাঁকে দলের জেলা কমিটি প্রচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরপরই বিকেলে কংগ্রেসের তরফে প্রার্থী হিসেবে তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এককাট্টা লড়াই না সিপিএম এবং কংগ্রেসের আলাদা প্রার্থী, সে নিয়ে সংশয় দূর হওয়ার বদলে এ দিনের পরে তা আরও জটিল হয়েছে বলে কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীদের একাংশের দাবি। তবে দু’দলের নেতারাই দাবি করেন, বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসেবে বিশ্বনাথবাবু লড়াই করলে বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারবেন বলে তাঁদের ধারণা।
বিশ্বনাথবাবু সোনামুখী কলেজে ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৭ সালে দুর্গাপুর পুরসভার প্রথম ভোটে তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলরও হন। ২০০১ সালে যোগ দেন তৃণমূলে। এর পরে ২০০২ ও ২০০৭-এ ওই ওয়ার্ড থেকেই তৃণমূলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দুর্গাপুরে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন বিশ্বনাথবাবু। ৩০ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় ২০১২ সালে তিনি ৪২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন। তবে তাঁর প্রার্থিপদ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তৃণমূল সূত্রের দাবি, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে দলে নতুনের ভিড় বাড়তে থাকায় অনেক পুরনো নেতার মতো বিশ্বনাথবাবুও পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় নেতৃত্ব তাঁকে আর প্রার্থী করা হবে না বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে মনোনয়ন জমা করে দেন তিনি। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের রাজ্যস্তরের নেতাদের ধরে তিনি টিকিট পান। জিতে ফের কাউন্সিলরও হন।
কিন্তু এ ভাবে স্থানীয় নেতৃত্বকে অস্বীকার করে রাজ্য থেকে টিকিট আদায় করে আনার বিষয়টি দলের দুর্গাপুরের নেতারা ভাল ভাবে নেননি বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর। ক্রমশ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। শহরের মেয়র তথা বিধায়ক অপূর্ববাবুর সঙ্গে এক সময় তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু এ বার বিধানসভা ভোট ঘোষণার আগে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, দু’জায়গাতেই অপূর্ববাবুর ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচনী বৈঠকে ডাক না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন বিশ্বনাথবাবু। বুধবার তাঁর একটি তৃণমূলের একটি সভাতেও তাঁকে ডাকা হয়নি। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথবাবুকে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে অপূর্ববাবুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামানোর পরিকল্পনা আগেই করেছিল বামেরা। সে খবর পাওয়ার পরে দলের তরফেও তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা হয়। তবে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা না করায় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে শনিবার কংগ্রেস নেতৃত্ব নাম জানানোর পরে তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সিপিএম সূত্রে আবার জানা গিয়েছে, জেলা কমিটির নির্দেশ পাওয়ার পরে বিপ্রেন্দুবাবু আবার নতুন করে প্রচার কর্মসূচির পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস বিশ্বনাথবাবুর নাম ঘোষণা করার পরে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে দলের জেলা কমিটির এক নেতার কথায়, ‘‘কংগ্রেসকে আসনটি ছাড়ার কথা জানিয়েছিল রাজ্য কমিটি। সেক্ষেত্রে হয়তো পাল্লা ভারী বিশ্বনাথবাবুর দিকেই।’’ বিশ্বনাথবাবু এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘দেখা যাক, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়।’’