পুলিশের নজরদারিতে কৈথনে ফিরছেন মহিলারা। নিজস্ব চিত্র
মাস তিনেক ধরে বাড়িতে পা পড়েনি তাঁদের। ফেরার দাবি জানিয়ে একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। শেষমেশ সোমবার স্থানীয় পঞ্চায়েত, পুলিশের নজরদারিতে ঘরে ফিরলেন কাটোয়ার কৈথনের ২৩টি পরিবারের মহিলা ও শিশুরা। পুলিশের দাবি, বাকিদেরও ধীরে ধীরে ফেরানো হবে।
এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ কৈথন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠে জড়ো হন ঘরছাড়াদের কয়েকজন। এখানেই রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। গত ২৩ অগস্ট কৈথন নীলের পাড়ে সাহাঙ্গীর শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হওয়ার পরে এলাকার পরিস্থিতি সামাল দিতেই ওই অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি হয়। এ দিন ক্যাম্পে ছিলেন কাটোয়া থানার আইসি শৈবাল বাগচি, এসডিপিও ত্রিদিব সরকার। ৩টে নাগাদ ঘরছাড়া ২৩টি পরিবারের ৩৫ জন মহিলা ও শিশু গিধগ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় পুলিশি তত্ত্বাবধানে গ্রামে ঢোকেন। এই পরিবারগুলির পুরুষ সদস্যদের বেশির ভাগই ওই খুনে অভিযুক্ত। এত দিন পরে বাড়িতে ঢুকে কান্নায় ভেঙে পড়ে বছর চোদ্দোর রানি খাতুন। স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সে। রানি বলে, ‘‘এতদিন স্কুলে যেতে পারিনি। ক্ষতি মেটাব কী করে জানি না।’’ রানির বাবা নজু শেখও এই মামলায় অভিযুক্ত।
গিধগ্রামের প্রধান রোহিমা বিবির স্বামী অ্যালেন শেখ গোষ্ঠীর ঘনিষ্ট ছিলেন সাহাঙ্গির। খুনে নাম জড়িয়েছিল তাঁদের বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত আজমত শেখ ও তার দলবলের। তারপর থেকেই এলাকাছাড়া প্রায় চারশো বাসিন্দা। আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কোনওরকমে দিন গুজরান করছিলেন তাঁরা। এ দিন অ্যালেন বলেন, ‘‘উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো মহিলা ও শিশুদের গ্রামে ঢোকানো হল। তবে এ সব পরিবারের পুরুষেরা সবাই অভিযুক্ত।’’ তাঁরা গ্রামে ঢুকলে উত্তেজনা ছড়াতে পারে বলেও তাঁর আশঙ্কা। প্রধান রোহিমা বিবি বলেন, ‘‘খুনে অভিযুক্ত আজমত শেখ ও তার দলবল আগে সিপিএম করত। পরে প্রধান হওয়ার লোভে তৃণমূলে যোগ দিয়ে এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল।’’ যাঁরা নির্দোষ তাঁরা যাতে গৃহহীন না হয়ে পড়েন সে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানান তিনি।
পঞ্চায়েতের তৃণমূল পর্যবেক্ষক অরিন্দম বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের নির্দেশ যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে সবাই গ্রামে থাকতে পারে। নির্দোষদের কখনই ঘরছাড়া হতে হবে না।’’