সন্তান কোলে শেখ রিয়াজ।
এলাকার মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের নিজের খরচায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতেন তিনি। খেলাধুলোর সরঞ্জাম জোগানো থেকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া, নানা ভাবে স্থানীয় যুবকদের পাশে থাকতেন। বুধবার সকালে বালির ট্রাক্টরের ধাক্কায় সেই শেখ রিয়াজের মৃত্যুর খবর আসার পরে শোকস্তব্ধ সালানপুরের জেমারি পঞ্চায়েতের শেখপাড়ার বাসিন্দারা।
বুধবার সকালে বাড়ি থেকে শ’দুয়েক মিটার দূরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। খবর চাউর হতেই পাড়ার লোকজনের ভিড় ভেঙে পড়ে শেখ পরিবারের বাড়ির সামনে। রিয়াজ পেশায় ছিলেন আমিন। ছেলে ও দুই নাতি-নাতনির মৃত্যুসংবাদ শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন রিয়াজের বৃদ্ধ বাবা শেখ আমির। আসানসোলের একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃদ্ধা মা বিলাপ করে চলেছেন। আট মাসের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে শোকে কার্যত পাথর হয়ে গিয়েছেন রিয়াজের স্ত্রী রুবিয়া বিবি।
রিয়াজের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন এলাকার অনেকেই। পাড়ায় ঢোকার মুখে একটি চাতালে বসে আক্ষেপ করছিলেন কয়েকজন যুবক। এক জন শেখ মাসুদ জানান, গ্রামের অন্তত জনা পঞ্চাশ যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিলেন রিয়াজ। কাউকে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। কাউকে জমি মাপজোকের কাজ শিখিয়ে আয়ের রাস্তা দেখিয়েছেন। কাউকে আবার অর্থ সাহায্য করে স্বনির্ভর করে তুলেছেন।
ওই পাড়ার বাসিন্দা শেখ আস্তারুল বলেন, ‘‘আমার ভাই ইকবাল যখন পড়াশোনা শেষে কী করবে বুঝতে পারছিল না, তখন রিয়াজই নিজের চেষ্টায় ওকে পটনায় কাজ জোগাড় করে দিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ইমরান জানান, প্রতি বছর এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিজের খরচে গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া ও তাদের জলখাবারের ব্যবস্থা করতেন রিয়াজ। গ্রামবাসীর আগ্রহে তিনি এলাকার ছাত্র-যুবদের নিয়ে ক্রিকেট দলও তৈরি করে ছিলেন। আশপাশের বহু এলাকায় ওই দল নিয়ে তিনি নিয়মিত খেলতে যেতেন। ইদ, কালীপুজো বা দুর্গাপুজো— সব উৎসবই তাঁর কাছে যেন ছিল নিজের উৎসব। স্থানীয় বাসিন্দা সুকান্ত দাস জানান, জেমারি লাগোয়া এলাকায় কালীপুজো ও দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা থাকত রিয়াজের। মঙ্গলবার রাতে শেখপাড়া-সহ লাগোয়া অঞ্চলের মানুষজনকে নিয়ে রোজা ভাঙার অনুষ্ঠান করেন তিনি।
আসানসোল হাসপাতালে ময়না-তদন্ত শেষে বন্ধুর দেহ জাপটে তুহিন আখতার কেঁদে উঠে বলেন, ‘‘ইদের উৎসব মাটি করে চলে গেল রিয়াজ।’’