মেমারির একটি গ্রামে ‘ডাইন’ অপবাদে প্রায় ১৫ মাস বাড়িছাড়া একটি পরিবার।
বর্ধমানের কাছেই হাটশিমুল গ্রামেও একই অপবাদে বধূকে মারধর, গ্রামছাড়া করা হয়। পরে মহিলা কমিশন ও পুলিশের সহযোগিতায় ফেরেন তিনি।
জামালপুরে ‘ভূতে ধরেছে’ বলে এক বধূর উপর নির্যাতন চলে। অসুস্থ হয়ে পুলিশের সাহায্যে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয় তাঁকে।
তিনটি ঘটনায় ঘটেছে আদিবাসী সমাজে। ‘এগিয়ে থাকা’ জেলা বর্ধমানে গত এক বছরে ১৪টি এই ধরণের ঘটনা প্রশাসনের কাছে লিপিবদ্ধ হয়েছে। যদিও আধিকারিকদেরই দাবি, বাস্তবে ঘটেছে আরও তিন-চার গুন বেশি। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আরও নির্যাতনের ভয়ে আক্রান্তেরা প্রশাসন বা পুলিশের কাছে যেতে পারেন না।
এ বার তাই আদিবাসী সমাজের পরতে পরতে মিশে যাওয়া কুসংস্কার, অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারনাকে উপড়ে ফেলতে উদ্যোগ করল প্রশাসন। শনি ও রবিবার, দু’দিন ধরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংস্কৃতি প্রেক্ষাগৃহে আদিবাসী সমাজের মাথাদের নিয়ে সম্মেলন হয়। সেখানে ঠিক হয়, সরকারের তরফে আদিবাসী সমাজের মোড়লদেরই অপপ্রচার, কুসংস্কার বন্ধ করার এবং স্থানীয়দের স্কুলমুখী করা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হবে।
জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “আমি নিজে আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি। জানি আমাদের সমাজে মোড়লদের ভূমিকা কতদূর। তাই সবাই মিলে ঠিক করেছি, কুসংস্কার বিরোধী প্রচারের দায়িত্ব মোড়লদের দেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, মোড়লেরাই একটি দল গড়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার করবে। তাতে ফল মিলবে অনেক বেশি। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনো বলেন, “নেতিবাচক থেকে মোড়লদের ইতিবাচক ভূমিকায় নিয়ে আসার জন্যই এই প্রচেষ্টা।”
এর সঙ্গেই শুধু ডাইনি বা ভূতে ধরা নয়, সাপে কাটা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া কিংবা ঘরে ঘরে চোলাই মদ তৈরির প্রবণতা আটকাতেও মোড়লদের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়। সভা শেষে আউশগ্রামের বোধন সোরেন কিংবা মঙ্গলকোটের গণেশ মুর্মুরা বলেন, ‘‘আমরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এগিয়ে আসার তাগিদটা সমাজের ভিতরে তোলার চেষ্টা করব।’’