Arnab Dam

সোমেই পিএইচডিতে ভর্তি হচ্ছেন মাওবাদী বন্দি অর্ণব! ‘জট নেই’, বললেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

জেলবন্দি অর্ণব দাম বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ১৩:৪১
Share:

(বাঁ দিকে) অর্ণব দাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র

সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে সোমবারই মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের পিএইচডিতে ভর্তি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র। তিনি বলেন, সোমবার বিকেল ৩টের সময় ইতিহাস বিভাগে পিএইচডিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে জেলবন্দি মাওবাদী নেতা কী ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস করবেন, সে বিষয়ে এখনও অন্ধকারে উপাচার্য।

Advertisement

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান, তিনি হুগলি জেলা সংশোধনাগারের সুপারকে যে চিঠি দিয়েছিলেন, তার উত্তর এখনও আসেনি। তবে তাঁর আশা, সোমবার বিকেলের মধ্যেই জবাবি চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছবে। রবিবারই অর্ণবকে চুঁচুড়ার হুগলি জেলা সংশোধনাগার থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে আনা হয়। রবিবার থেকেই অর্ণব বর্ধমান জেলের আবাসিক হয়েছেন।

গত বুধবার অর্ণবের পিএইচডিতে ভর্তির বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নামেন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ। তিনি প্রথমে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং কারামন্ত্রী অখিল গিরির সঙ্গে। কুণালই অভিযোগ করেছিলেন, উপাচার্য জট পাকাচ্ছেন। তার পর কুণালের সঙ্গে উপাচার্যের কথা হয়। কুণালের সঙ্গে ফোনে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানান উপাচার্যও।

Advertisement

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অর্ণব বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্য পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় ২৪৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ইন্টারভিউয়ে প্রথম হয়েছেন তিনি। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, পিএইচডির মেধাতালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের ৯ জুলাই কাউন্সেলিং শুরু হবে। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হচ্ছে।

অর্ণবের গবেষণায় ‘বাধা দেওয়ার’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্ধমানের উপাচার্য আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, দু’টি প্রশ্নের সদুত্তর মিললেই যাবতীয় ‘জটিলতা’ কেটে যাবে। তিনি বলেন, “আমি হুগলির জেল সুপারকে চিঠি দিয়ে দু’টি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রথম প্রশ্ন, কী ভাবে অর্ণব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিয়মিত ক্লাস করবেন? সে ক্ষেত্রে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি কে বা কারা দেখবেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন, অর্ণবকে পিএইচডি করতে দেওয়ার বিষয়ে জেল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন রয়েছে কি না।” উপাচার্য জানান, ওই দু’টি বিষয়ের ‘সদুত্তর’ না মেলায় অর্ণবের পিএইচডিতে ভর্তির বিষয়টি শুরু করা যাচ্ছে না। ওই বিষয়ে নিজের ‘সদিচ্ছা’র দিকটিও ব্যাখ্যা করেন উপাচার্য। তিনি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯টি বিভাগের মধ্যে কেবল ইতিহাস ছাড়া অন্যগুলিতে পিএইচডিতে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁরা হুগলি জেলের সুপারকে দেওয়া চিঠির উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল, পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় চুঁচুড়ার সংশোধনাগার। সেখানে গ্রন্থাগারও আছে। সেই গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা করেন। অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানান তিনি। বিচারক সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন। কিন্তু সংশোধনাগারের কেউ প্রথমে অর্ণবের আবেদনকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও অর্ণব নিজের দাবিতে অনড় থাকেন। দাবি আদায়ের জন্যে অর্ণব অনশন কর্মসূচি শুরুর কথাও ঘোষণা করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement