Kazi Nazrul University

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ‘ব্যথিত’ উপাচার্য

পাশাপাশি, রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টিতে কার্যত কোনও অনিয়ম দেখছেন না উপাচার্য। দেবাশিস বলেন, “যে কাজ সরকার করতে পারত, সেটা আচার্য করেছেন।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭
Share:

উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অবদানের’ কথা বললেন। সে সঙ্গে, মমতার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রয়োজনে ‘আর্থিক অবরোধ’ করার ঘোষণায় ‘খুবই ব্যথিত’ বলেও মন্তব্য করলেন আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। উপাচার্যের এমন মন্তব্যে চর্চা শুরু হয়েছে শিক্ষক মহল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।

Advertisement

উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সংঘাত চরমে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, তিনি প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ‘আর্থিক অবরোধ’ তৈরি করবেন। শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “কোনও বিশ্ববিদ্যালয় ওঁর (রাজ্যপাল) নির্দেশ মেনে চললে আর্থিক বাধা তৈরি করব। বেতন কে দেয়?” এর পরে, শুক্রবার রাজ্যপাল বোসের নিয়োগ করা অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের অন্যতম দেবাশিস বলেন, “একেবারে শিক্ষক দিবসের দিন মুখ্যমন্ত্রীর আর্থিক অবরোধের ঘোষণায় খুবই ব্যথিত হয়েছি। এটা সম্মানের প্রশ্ন। আমি টাকা না নিয়ে কাজ করতে পারি। কিন্তু আমার পরিবারের ভরণপোষণ কী ভাবে চলবে?” তাঁর সংযোজন: “মুখ্যমন্ত্রীয় হয়তো কোনও বিষয়ে ব্যথিত হয়ে থাকতে পারেন। তাই এমন মন্তব্য করেছেন। তবে, এই একটা কথা নিয়ে ভাবলে চলবে না।”

পাশাপাশি, রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টিতে কার্যত কোনও অনিয়ম দেখছেন না উপাচার্য। দেবাশিস বলেন, “যে কাজ সরকার করতে পারত, সেটা আচার্য করেছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর ব্যথিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।” সে সঙ্গে, নিজের উদাহরণ টেনে সরকারের ‘স্বীকৃতির’ কথাও বলছেন উপাচার্য। জানিয়েছেন, ২০১৯-এ রাজ্যই তাঁকে ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান জানিয়েছিল। তাঁকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেছেন আচার্য বোস। অর্থাৎ এতে প্রমাণ হয় যে, সরকার-স্বীকৃতদেরই উপাচার্য পদে নিয়োগ করেছেন আচার্য।

Advertisement

সে সঙ্গে, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় মমতার অবদান নিয়েও মন্তব্য করেছেন উপাচার্য। দেবাশিস মন্তব্য করেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে মুখ্যমন্ত্রীর অবদান অনেক। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ খুবই ইতিবাচক। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবন ও বিকাশভবনের অযথা স্নায়ুর চাপ চলছে বলেও মন্তব্য করেন দেবাশিস। সে সঙ্গে, দেবাশিস বলছেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-সহ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তেমন কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না করায় শিক্ষকেরাই রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন। রাজ্যপাল উপলব্ধি করেন, এই রাজ্যেরই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়েছেন। তাই ব্যবস্থা নিয়েছেন।” এই মন্তব্যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত-অচলাবস্থা ও সরকারের ভূমিকারও প্রকারন্তরে সমালোচনাই করেছেন উপাচার্য, মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

শিক্ষা-মহলের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আচার্য সি ভি আনন্দ বোসের নিয়োগ করা উপাচার্যদের মধ্যে পাঁচ জন আবার ইতিমধ্যে ইস্তফাও দিয়েছেন। সে প্রসঙ্গ তুলে বোস সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, ওই উপাচার্যদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওই পাঁচ জনের কাছে আবার প্রমাণ চেয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতর।

এমন আবহে দেবাশিসের এমন মন্তব্য নিয়ে চর্চা হওয়াটা যে স্বাভাবিক, তা মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে ওয়েবকুটার জেলা সম্পাদক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যপাল এ ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু রাজ্য নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি বলে রাজ্যপাল দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে বেতন বন্ধের ঘোষণা খুবই অপমানজনক। বেতন সরকারই দেয়। এটা সরকারের দায়িত্ব।” দেবাশিসের ‘ব্যথিত’ মন্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ওয়েবকুপার জেলা সম্পাদক বীরু রজকও। তবে, তাঁর সংযোজন: “উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক। কিন্তু কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement