কলেজ চত্বরেই চলছে ভ্যানো তৈরির কাজ। ছবি: বিকাশ মশান।
শিক্ষার প্রসারের জন্য দেওয়া জমিতে ভ্যানো তৈরির অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরে। বেসরকারি প্যারামেডিক্যাল কলেজ চত্বরেই এই ভ্যানো তৈরি নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, পঠন-পাঠনে বিঘ্ন না ঘটিয়ে অল্প সংখ্যক ভ্যানো তৈরি করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্যারামেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য প্রায় ১০ একর জমি দিয়েছিল এডিডিএ। তার প্রায় অর্ধেক জুড়ে ২০০২ সালে চালু হয় কলেজটি। হসপিট্যাল ম্যানেজমেন্ট, নিউট্রিশন-সহ নানা বিষয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা হয় এখানে। ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা হস্টেল রয়েছে। সম্প্রতি নিউট্রিশন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে কলেজে অশান্তি হয়। সেই সময়েই প্রকাশ্যে আসে কলেজের ভিতরে ভ্যানো তৈরির বিষয়টি।
যন্ত্রচালিত এই যানটি নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। যে কোনও মোটরযান পরিবহণ দফতরে নথিবদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভ্যানো নথিবদ্ধ করার কোনও প্রক্রিয়া এখনও শুরু করতে পারেনি পরিবহণ দফতর। কম দাম এবং কম জ্বালানি খরচের দরুণ ইতিমধ্যে যানটি রাজ্যের নানা এলাকায় চলতে শুরু করেছে। দুর্গাপুর শহরেও দিন দিন ভ্যানোর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এখনও সরকারি ভাবে বৈধতা পায়নি সেটি। অথচ, বিধাননগরে প্যারামেডিক্যাল কলেজে সেই যানই তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কলেজে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ভ্যানো তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। তিনটি ভ্যানোর কাঠামো রয়েছে। পাশে রয়েছে বিভিন্ন সরঞ্জাম। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে ভ্যানো তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যে এখানে তৈরি ভ্যানো বাজারে বিক্রিও শুরু হয়েছে। সপ্তাহে দু’তিনটি ভ্যানো তৈরি করা হয়। দু’ধরনের ভ্যানো তৈরি হয়— গিয়ার যুক্ত এবং গিয়ার ছাড়া। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এখানে ভ্যানো তৈরি করা হয় না। বাইরে থেকে সরঞ্জাম কিনে এনে এখানে একত্র করার কাজ হয়। ভ্যানো তৈরির জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্য চার কাঠা জমির জন্য আবেদন জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছে। ওয়ার্কশপের দায়িত্বে থাকা কলেজ পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য কৌশিক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘আপাতত কলেজের এক পাশে একটি-দু’টি করে ভ্যানো তৈরি করা হচ্ছে। তবে পঠন-পাঠনে কোনও বিঘ্ন হচ্ছে না। জমি পেলে সেখানেই ওয়ার্কশপ করা হবে।’’
কলেজ গড়ার জন্য দেওয়া জমিতে ব্যবসায়িক স্বার্থে এ ভাবে মোটরযান তৈরির খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে এডিডিএ। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “শিক্ষার প্রসারে দেওয়া জমি এ ভাবে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করা যায় না।” পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা শহরের বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যদি এই খবর সত্যি হয় তাহলে পুরোপুরি বেআইনি কাজ করছেন ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে।”